কাঁথির ঢেউ কলকাতায়। বিজেপির মিছিল থেকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি আটকানোর ঘটনায় ধুন্ধুমার বাঁধে রাজ্য রাজনীতিতে। কাঁথির ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার কলকাতায় মিছিল করে বিজেপি। এদিন বিজেপির রাজ্য দপ্তর থেকে মিছিল বের হয়। এরপর রাস্তার উল্টো দিক থেকে আসা তৃণমূল মহাসচিবের গাড়ি আটকে কালো জ্যাকেট দেখিয়ে প্রতিবাদ করেন বিজেপি কর্মীরা। এদিকে কাঁথির ঘটনার পর বর্ধমানে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যতদিন তৃণমূল ক্ষমতায় থাকবে ততদিন হাতে লাঠি নিয়ে ঘোরাফেরা করুন। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সভাতেও কর্মীদের লাঠি সঙ্গে রাখতে বলেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি।
মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর জনসভা ছিল। সেই সভার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাঁথি শহর। তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মত একাধিক ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
তৃণমূল বিজেপির ওপর হামলা চালিয়েছে, এই অভিযোগে এদিন কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মিছিল শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন মুকুল রায়, সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। মিছিল দলের রাজ্য দপ্তর থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে ওঠার পর পরই পার্থবাবুর গাড়ি আটকানোর ঘটনাটি ঘটে। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: কেন নরেন্দ্র মোদীর সভা হয়ে গেল মতুয়া মহাসংঘের সমাবেশ?
এদিনের মিছিল যখন ধর্মতলা অভিমুখী, ঠিক তখন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কনভয় নিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, হঠাৎ মিছিল থেকে কয়েকজন বিজেপি সমর্থক ছুটে যান পার্থবাবুুর গাড়ির দিকে। প্রথমে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। কালো পোষাক দেখিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তবে মিছিল ততক্ষণে ধর্মতলার দিকে চলতে শুরু করেছে। এই ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজন বিজেপি সমর্থককে আটক করেছে বলে খবর। এরপর মিছিল আটকানো হয় ধর্মতলার চার রাস্তার মুখে। এই মিছিলের জেরে এদিন বেশ কিছুক্ষণ যানজট সৃষ্টি হয় ধর্মতলায়।
আরও পড়ুন, দেশ লড়ুক মোদীকে জেতাতে, বাংলায় বিজেপি-র লক্ষ্য অন্য: অমিত শাহ
রাস্তায় ম্যাটাডোরের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন বিজেপির সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসু, রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি নেতা মুকুল রায় শিক্ষামন্ত্রীর ওপর বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন। সায়ন্তন বলেন, "আমাদের সভাপতি দিলীপ ঘোষের ওপর বারে বারে হামলা হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।" এদিকে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, কাঁথিতে তাদের ১০০-র ওপর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রায় ৬০ বিজেপি সমর্থক জখম হয়েছেন। এমনকী আজও বেশ কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও তাঁর দাবি।
এদিকে আবার কাঁথির ঘটনার প্রেক্ষিতে বর্ধমানে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির নেতা কর্মীদের হাতে লাঠি তুলে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। প্রচুর পরিমাণে লাঠি সঙ্গে রাখতে বলেছেন তিনি। রাহুল বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর সভাতেও কার্যকর্তারা লাঠি সঙ্গে রাখুন। কার্যকর্তাদের আত্মরক্ষার্থে এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, পুলিশ প্রশাসনের সামনেও মারধর খাচ্ছেন দলের কার্যকর্তারা।" এদিকে সোমবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে খোদ কাঁথিতে প্রতিবাদ মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের দাবি, বাংলায় পরিকল্পনা করে অশান্তি করছে বিজেপি।