Advertisment

বঙ্গ বিজেপিতে বিরাট চমক, কৈলাসের ডানা ছেঁটে মুকুল শিবিরকে বার্তা হাইকমান্ডের

সূত্রের খবর, রাজ্য় বিজেপির অন্তর্কলহ সামাল দিতে এবার নাকি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kailash Vijayvargiya, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়

কৈলাশ ও মুকুল।

একুশের লড়াইয়ের আগে একেবারে আটঘাঁট বেঁধে ময়দানে নামছে বঙ্গ বিজেপি। অন্তত তেমন আভাসই মিলছে। একুশের মহারণে যাতে কোনওভাবেই জয় হাত ফসকে না যায় তার জন্য় অতি সন্তর্পণে পা ফেলছে গেরুয়া বাহিনী। সে কারণেই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের মতো কাঁটাকে সরিয়ে কোমর বেঁধে ভোটের লড়াইয়ে নামতে তৎপর পদ্মশিবির। বাংলা দখলের লড়াইয়ের আগে এবার সাংগঠনিক স্তরে বিরাট রদবদল করল হাইকমান্ড। সূত্রের খবর, বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ডানা ছাঁটা হয়েছে।

Advertisment

বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের ২ নম্বর হিসেবে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে আরএসএস প্রচারক অমিতাভ চক্রবর্তীর অভিষেকের পরই নাকি বাংলার থেকে মধ্য়প্রদেশে বেশি নজর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বিজয়বর্গীয়কে। আর তাঁর জায়গায় বাংলার জন্য় বেশি সময় দিতে নির্দেশ পৌঁছেছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশের কাছে।

সূত্রের খবর, রাজ্য় বিজেপির অন্তর্কলহ সামাল দিতে এবার নাকি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর তার ফলেই, বিজয়বর্গীয়কে বাংলা ছেড়ে মধ্য়প্রদেশে নজর ঘোরাতে বলার নির্দেশ। ৬, মুরলীধর সেন লেনে দুই ‘বিবদমান’ গোষ্ঠীকে বার্তা দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: সুব্রতকে সরিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ, বঙ্গ বিজেপিতে কীসের ইঙ্গিত?

এ প্রসঙ্গে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘‘কোনওরকম অন্তর্দ্বন্দ্ব বরদাস্ত করবে না দল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে সাফল্য় মিলেছিল, সেই সাফল্য়ের ধারা কোনওভাবেই নষ্ট করতে চায় না দল। দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায় শিবিরের মধ্য়ে যেভাবে দ্বন্দ্ব বাড়ছে, তাতে ২০২১ সালে রাজ্য়ে বিধানসভা ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাচ্ছে। সে কারণেই, নিজের হাতে রাজ্য় নেতৃত্বকে রাখতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এখন থেকে, দলের রাজ্য় নেতৃত্বকে সামলে রাখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরাই কৌশল বাতলে দেবেন’’।

উল্লেখ্য়, ২০১৭ সালে ঘাসফুল ছেড়ে মুকুল রায়ের হাতে পদ্মফুল ওঠার পর থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে দুই শিবিরের আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়েছে। এই বিভাজন আরও সুস্পষ্ট হয়, যখন তৃণমূলে ভাঙন ধরিয়ে মমতা বাহিনীর একের পর এক নেতা মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। এরপরই বঙ্গ বিজেপির পুরনো সৈনিকরা দিলীপ ঘোষের সঙ্গ নেন, আর নবাগতরা মুকুলের হাত ধরেন। মুকুল রায়ের পাশে থাকেন আবার কৈলাস বিজয়বর্গীয়।

আরও পড়ুন: ‘বিরোধ মিটতে ১ মিনিটই যথেষ্ট’, দ্বন্দ্ব ভুলে দিলীপকে প্রণাম সৌমিত্রর

সম্প্রতি রাজ্য় বিজেপিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। গত মাসেই নতুন রাজ্য় কমিটি তৈরির পর থেকেই মনোমালিন্য় ক্রমশ প্রকট হয়েছে। নয়া কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পেয়েছেন নবাগতরা। দীর্ঘদিন পর জাতীয়-সহ সভাপতির পদ পেয়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঠাঁই পান মুকুল। একুশের মহাযুদ্ধের আগে বিজেপিতে মুকুলের দায়িত্ব বৃদ্ধি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ব্য়াখ্য়া রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।

অন্য়দিকে, একদা রাজ্য রাজনীতির ‘চাণক্য’ হিসাবে অভিহিত মুকুলের পদপ্রাপ্তিতে ক্ষোভ উগরে নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিও পোস্ট করে বিতর্ক বাড়ান রাহুল সিনহা। রাহুল সিনহা বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এবার তৃণমূল থেকে আসা আরেক নেতা অনুপম হাজরাকে কেন্দ্রীয় সম্পাদক করা হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভপ্রকাশ করে রাহুল বলেন, ‘‘৪০ বছর বিজেপি করার পুরস্কার পেলাম’’।

আরও পড়ুন: “৪০ বছর বিজেপি করার পুরস্কার পেলাম”, মুকুলদের পদপ্রাপ্তিতে ক্ষুব্ধ রাহুল সিনহা

এই পর্বের পর পুজোর মধ্য়ে নতুন করে বিতণ্ডা বাধে ৬, মুরলীধর সেন লেনে। ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সব জেলা কমিটি ভেঙে দেন বিজেপি রাজ্য় সভাপতি। দিলীপ ঘোষের এহেন সিদ্ধান্তের পরই ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার হোয়াটসঅ্য়াপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান যুব মোর্চার রাজ্য় সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। যদিও পরক্ষণেই ওই গ্রুপে ফের যুক্ত হন। বিবাদ মিটিয়ে বিজয়া দশমীতে দিলীপের বাড়িতেও দেখা যায় সৌমিত্রকে। কিন্তু বারবার যেভাবে দলের অন্তর্কলহ সামনে আসছে, তা রুখতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এহেন হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

এরপরই দলীয় সংগঠনে রদবদল করে দিলীপ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুব্রত চট্টোপাধ্য়ায়কে সরিয়ে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে অমিতাভ চক্রবর্তীকে আনা হয়। সূত্রের খবর, এই রদবদল একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি রাজ্য় বিজেপি সভাপতি।

অন্য়দিকে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ডানা ছেঁটে মুকুল রায় শিবিরকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমন বার্তাই দিলেন যে, ঘোষ শিবিরের সঙ্গে একতা রেখেই বিধানসভা ভোটে লড়তে হবে তাঁদের। এ প্রসঙ্গে এক বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘‘দুই শিবিরকেই বুঝতে হবে বাংলায় দলের লক্ষ্য় কী এবং সেই লক্ষ্য়পূরণের কাজই করতে হবে। কোনও অন্তর্দ্বন্দ্বের জায়গা নেই দলে’’।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

bjp dilip ghosh mukul roy Kailash Vijayvargiya
Advertisment