মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা সরগরম করা কুর্সি দখলের লড়াইয়ে অবশেষে নিজেদের অবস্থানে নরম হতে চলেছে বিজেপি এবং শিবসেনা। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়াও ১৩ থেকে ১৫টি মন্ত্রিত্ব দেওয়া হচ্ছে শিবসেনাকে। যদিও বিজেপির উপর চাপ বাড়িয়ে ৫০-৫০ ফর্মুলায় আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে নমনীয় হল শিবসেনা, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকার গঠনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বলেন, "যা কিছু সম্ভব তার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাব।"
আরও পড়ুন- ‘বাঙালিদেরই বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে’
একদা শিবসেনা মুখপাত্র তথা বর্তমান সাংসদ সঞ্জয় রাউত সমান অংশীদারিত্বের দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা দলের পক্ষে প্রয়োজন ছিল। তবে শিবসেনা “সম্মানের” বিষয়ে কোনও আপস করবে না। তিনি আরও বলেন, "কোনও ব্যক্তি নয়, রাজ্য কী চাইছে সেটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্ত যা নেওয়া হবে, তা ভেবেচিন্তে রাজ্যের কথা মাথায় রেখে নেওয়া দরকার।"
বিজেপির এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে যে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়াও শিবসেনাকে পিডাব্লুডি, রুরাল ডেভেলপমেন্ট, শিল্প এবং স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনওভাবেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়বে না বিজেপি। এমনকি স্বরাষ্ট্র, অর্থ, নগরোয়ন্নন এবং রাজস্ব দফতরও শিবসেনাকে ছাড়তে নারাজ পদ্মশিবির। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, সেনা যদি বিশেষ দাবি জানায়, সেক্ষেত্রে রাজস্ব, কৃষি দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে তাদের।
আরও পড়ুন, জম্মু-কাশ্মীর আজ থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, শুরু রাজনৈতিক বিকল্প তৈরির প্রক্রিয়া
বুধবার বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ বলেন, "বিজেপি এবং শিবসেনা মিলিতভাবে সরকার গঠন করবে। তবে ঠিক কোন পথে রফা হবে, সেই প্রক্রিয়া চলছে এখন। সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে।" প্রসঙ্গত, আগামী সপ্তাহে মুম্বই পৌঁছানোর কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন বলেও খবর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বলেন, "আমরা শিবসেনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে ৫০:৫০ ক্ষমতা বন্টন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই করা হবে। তবে তা মুখ্যমন্ত্রী পদ বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সঙ্গে তুলনা করে নয়।" সেক্ষেত্রে ১৩-১৫টি পদ পেতে পারে শিবসেনা। অন্যদিকে, বিজেপি পেতে পারে ২৭-২৯টি পদ।
আরও পড়ুন- আগামী পাঁচ বছর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী আমিই থাকব: দেবেন্দ্র ফড়নবীশ
গেরুয়া শিবিরের এহেন মন্তব্যর পর শিবসেনা আশ্বস্ত করেছে যে তাদের যদি সম্মানজনকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তারা মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবে। এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার অবশ্য দাবি, "শিবসেনা এখন বুঝতে পারছে, একটা অবস্থানের পর আর চাপ দেওয়া সম্ভব নয়। বৃহনমুম্বাই পুরসভাতে শিবসেনা-বিজেপি জোট ছিল। সেখানে বিজেপির ৮২টি আসন থাকা সত্ত্বেও বিজেপি শিবসেনাকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। বিজেপি চাইলেই এখনও খেলা বদলাতে পারে।" উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ২৮৮টি আসনের মধ্যে পদ্ম শিবির জয়লাভ করেছে ১০৫টি আসনে, অন্যদিকে ৫৬টি আসনে জয়লাভ করেছে শিবসেনা।
Read the full story in English