সামনের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে চিট ফান্ড যে ফের বড় ইস্যু হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানা এবং তার জেরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেট্রো চ্যানেলের ধর্নার হাত ধরেই নতুন জীবন পেল চিট ফান্ড কাণ্ড, বিশেষ করে সারদা কেলেঙ্কারি।
বাজার গরম বুঝে এদিকে শনিবার মিন্টো পার্কে রোজ ভ্যালির এজেন্ট ও আমানতকারিদের অনশন মঞ্চে সটান হাজির হলেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় স্তরের বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। বিজয়বর্গীয়র হাতে সরবত খেয়ে চার দিনের অনশনে ইতি টানলেন ১১ জন। আন্দোলনকারিদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন বিজেপির রাজ্য পর্যবেক্ষক।
মজার ব্যাপার হলো, মিন্টো পার্কে রোজ ভ্যালির মালিকানাধীন এক হোটেলের সামনে ১২ নভেম্বর থেকে ওই চিট ফান্ড সংস্থার কয়েকশো প্রাক্তন এজেন্ট ও আমানতকারি অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছেন, কিন্তু বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের নজরে পড়েন নি। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ জন এখানে অনশন শুরু করেন। তাও শহর মন দেয় নি বিশেষ। এবার বোধহয় ভাগ্যের চাকা ঘুরল।
এই আন্দোলনকারিদের মধ্যে রয়েছেন ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা গুরুপদ মাহাতো। তিনি বাড়ি ছেড়ে নভেম্বর মাস থেকে কলকাতায় রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রোজ ভ্যালি আমানতকারি ও এজেন্টরা এই অনশন মঞ্চ থেকে দাবি তুলেছেন, রোজ ভ্যালির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাঁদের প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক।
বর্ধমানের মেমারি থেকে আসা কানাই মন্ডল বলেন, "৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন করছি। অবস্থানে বসেছি ১২ নভেম্বর থেকে। এখনও অবধি কোনও সুরাহা মেলেনি। ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে শুনানির কথা আছে। আমাদের কৈলাশজি কথা দিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করিয়ে দেবেন। আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না আমানতকারিদের তাগাদায়। আমি নিজেও টাকা রেখেছিলাম রোজ ভ্যালিতে।"
শনিবার বিকেলে প্রায় মিনিট চল্লিশ মিন্টো পার্কে অনশনকারিদের সঙ্গে কথা বলেন ওই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা। একে একে প্রায় সবার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। আন্দোলনের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অনুরোধ করেন অনশন প্রত্যাহার করে নিতে। তারপরই সরবত তুলে দেন অনশনকারিদের হাতে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ধর্মতলায় ধর্না মঞ্চ করে সিবিআই এবং মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে জোরালো বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এবার বিজেপি কৌশলগতভাবে সরাসরি রোজ ভ্যালির আন্দোলনকারিদের পাশে দাঁড়াল। রাষ্ট্রীয় নেতা কথা দিলেন, তাঁদের সমস্যা নিয়ে ইডি ও রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেবেন।
এবারের লোকসভার নির্বাচনে এরাজ্যে বড়সড় ইস্যু হতে চলেছে চিট ফান্ড। শুধু তদন্ত প্রক্রিয়া নয়, এজেন্ট ও আমানতকারীদের এই কয়েক বছরে কী হাল হয়েছে, তারও প্রভাব ভোটের ওপর পড়তে বাধ্য। সমস্ত চিটফান্ড মিলিয়ে প্রতারিত মানুষের সংখ্যাটা কয়েক লক্ষ।
কানাই মন্ডল, গুরুপদ মাহাতোদের সঙ্গে রয়েছেন দুলাল আলি, পারিকুল শেখরাও। এক্ষেত্রে বিজেপি এঁদের পাশে থাকলে আর একটা ফায়দা পাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সাম্প্রদায়িক বিভেদের অভিযোগ থাকবে না। পারিকুলের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। তাঁর সঙ্গে অনেকটা সময় ধরেই আলোচনা করেছেন বিজয়বর্গীয়। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী।