তৃণমূল থেকে বিজেপিতে দল বদল ঘিরে সরগরম বাংলার রাজনীতি। প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন সাবেক ঘাসফুল নেতারা। এই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কিন্তু এবার এই ধরনের জার্সি দলের মাধ্যমে দলের কলেবর বৃদ্ধিতে রাশ টানতে চাইছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বিষয়ে আপাতত ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করতে চাইছে মোদী-শাহর দল। শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাবের কথা ইতিমধ্যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রামলাল জানিয়ে দিয়েছেন মুরলীধর সেন লেনের নেতাদের।
বিজেপি সূত্রে খবর, বাংলায় গেরুয়া শিবিরের ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটায় তৃণমূলের অনেকেই পদ্মমুখী হতে চাইলেও তাদের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবরাখবর এবং অতীত বিশ্লেষণ না করে দলে নেওয়া যাবে না। সম্প্রতি তৃণমূলের লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিজেপিতে যোগদান ঘিরেই চরম আলোড়ন শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। তবে শুধু দলের অন্দরেই নয়, 'সন্ত্রাসের মুখ' মনিরুলকে বিজেপি দলে নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে সোশ্যাল মিডিয়ার একটা বড় অংশ। একদা 'তৃণমূলী সন্ত্রাসের মুখ' মনিরুলের অতীত বিচার না করেই বিজেপি কীভাবে তাঁকে দলে নিল, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পদ্ম শিবিরের বর্ষীয়ান নেতারাই। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের 'গুন্ডা'দের বিজেপিতে নিলে বাংলায় বিজেপির ভাবমূর্তি খর্ব হবে।
আরও পড়ুন, মমতার কালীঘাটের বাড়িতে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ১০ লক্ষ পোস্টকার্ড পাঠাচ্ছেন অর্জুন সিং
বঙ্গ রাজনীতিতে চেনা নাম মনিরুল ইসলাম। তবে সাংবাদ মাধ্যমে অধিকাংশ সময়েই তাঁর মুখ দেখা গিয়েছে লাল বৃত্তের অন্দরে। ফরোয়ার্ড ব্লক কর্মী হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও পালা বদলের কালে সময় বুঝে তৃণমূল নাম লেখায় মনিরুল। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে পরপর লাভপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হলেও উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ব্যাপক হাওয়া দেখে সম্প্রতি জার্সি বদল করে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন মনিরুল। এই প্রসঙ্গে বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, "কোনও কিছু বিবেচনা না করেই যেভাবে দলে নেওয়া হ্চ্ছে তা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। তাঁর অতীত বিচার না করেই এমন অন্তর্ভুক্তি বিজেপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন, 'তৃণমূলী সন্ত্রাসের মুখ'রাই যদি বিজেপি ঠাঁই পায়, তাহলে কীভাবে এ রাজ্যে নির্ভরযোগ্য বিকল্প হবে? এভাবে আর চলতে পারে না। একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে"। এছাড়া, এতকাল বিজেপি নেতা-কর্মীরা তৃনমূলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-অন্যায়ের প্রশ্নে সোচ্চার হয়েছিলেন, এখন তারাই দল বদল করায় ক্ষুব্ধ হচ্ছেন পুরাতনী বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
সূত্রের খবর, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামলাল রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলায় যে বিজেপিকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো দক্ষ নেতার অভাব বোধ হচ্ছে। দলে যুবল প্রতিনিধিত্বের অভাব নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। এদিকে এই 'দল বদলের মূল কারিগর' মুকুল রায়ের দিল্লির ১৮১ নং সাউথ এভেন্যুর বাড়িতে এখনও শতাধিক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসতে চাওয়া মুখেদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব তো এই প্রবণতায় রাশ টানতে চাইছে, তাহলে কী করবেন মুকুল রায়? একদা তৃণমূলের 'চাণক্য' মুকুলের সাফ জবাব, "বাংলার মানুষ তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে ক্ষুদ্ধ এবং বিরক্ত। ওখানকার নেতারা প্রায়শই আমায় ফোন করে বলছেন যে তাঁরা দলে থাকতে চান না। তাছাড়া, আপনি যাদের দলে নিচ্ছেন তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে। তাহলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না"।
Read the full story in English