সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে যোগীরাজ্যে বিজেপি ভারসাম্য বজায় রাখতে মরিয়া। লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যার নিরিখে উত্তরপ্রদেশ বড় ফ্যাক্টর বিজেপির কাছে। উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনে লোকসভা নির্বাচনের আগে 'মিশন মোডে' কাজ করছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের দলীয় বিষয়গুলিও সংশোধন করতে মাঠে নেমেছে পদ্মশিবির। সেক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্যের নীতিও গ্রহণ করা হচ্ছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরোধীদের সংগঠনে জায়গা দিচ্ছেন।
ডাঃ রাধা মোহন দাস আগরওয়াল, যিনি গোরখপুরের একজন বিধায়ক ছিলেন, দলের তরফে প্রথমে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছিল, এখন তাকে জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। রাধা মোহন দাস আগরওয়ালকে (আরএমডি) বিধানসভায় আনার ক্ষেত্রে সিএম যোগীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
১৯৮৯ সালে, বিজেপি এখান থেকে বিধানসভা নির্বাচনে শিব প্রতাপ শুক্লাকে প্রার্থী করে। এরপর জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। টানা ৪ বার বিধায়ক হন তিনি। পঞ্চম বারের মত গোরক্ষনাথ মন্দির প্রকাশ্যে শিব প্রতাপের বিরোধিতা করলে তিনি পরাজিত হন।
২০০২ সালে, গোরক্ষনাথ মন্দির ডক্টর রাধা মোহন দাস আগরওয়ালকে হিন্দু মহাসভার প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করায়। ফলস্বরূপ, মন্দির সমর্থিত প্রার্থী বিজেপির শিব প্রতাপ শুক্লার জয়ের ধারা ভেঙে দেন।
যোগী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ডক্টর রাধা মোহন দাস আগরওয়াল আর ইউপি মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তারপর থেকে অনেকবার তাকে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি, গোরখপুরের ধর্মশালা বাজারে মারধরের ঘটনায় তিনি গোরক্ষপুর পুলিশকে আক্রমণ করে টুইটও করেছেন। তবে জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তিনি তার টুইটটি মুছে দেন। এখন আরএমডিকে জাতীয় মহাসচিব করা হলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে, যোগীর শক্ত ঘাঁটিতে কেন যোগীর বিরুদ্ধে যাঁরা জোরদার ছিলেন? সম্প্রতি, পিএম মোদি গীতা প্রেসের শতবর্ষ উদযাপনে অংশ নিতে এসেছিলেন, তখনও তিনি আরএমডিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিমানবন্দরে পৌঁছে মোদি প্রথমে ডক্টর রাধা মোহন দাস আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন।
রাজ্য বিজেপির এক সিনিয়ার নেতা বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আদিত্যনাথের দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি সংগঠনে আগরওয়ালের নিয়োগ এবং রাজ্যপাল হিসাবে শুক্লাকে বসানো পূর্ব ইউপিতে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে দলের প্রচেষ্টা হিসাবেই দেখা যেতে পারে," বলেছেন রাজ্য বিজেপির এক নেতা। আসলে, যোগীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ডক্টর রাধা মোহন দাস আগরওয়ালকে গত বছরের মে মাসে হঠাৎ করে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়। এর সঙ্গে তাকে কেরালার ইনচার্জ সহ একাধিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ড. রাধা মোহন দাস আগরওয়ালও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের জন্য গোরখপুর সিটি বিধানসভা থেকে তার আসন ছেড়েছিলেন।
অপরদিকে বিজেপি বিধায়ক শিব প্রতাপ শুক্লা যার বিরুদ্ধে যোগী আদিত্যনাথ বিধায়ক হিসাবে ডাঃ রাধা মোহন দাস আগরওয়ালকে প্রার্থী করেছেন৷ তাকে হিমাচলের গভর্নর করা হয়। এই অবস্থা শুধু গোরখপুরে নয়, গোটা রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে। ইউপি সরকারেও এমন অনেক মুখ রয়েছে, যাদের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর বিরোধিতা সর্বজনবিদিত। এতদসত্ত্বেও তার মর্যাদা কখন কমেনি বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তেই থেকেছে।