মহুয়া মৈত্রের কাছে এটা একটা লড়াই। মহুয়া আর আমি আলাদা দলের। শুধু তাই না। আমি মহুয়া মৈত্র যে দলের, তারও বিরোধী। তার হাজারো কারণও বলতে পারি। কিন্তু, সেসব এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে আমাদের আপাতত একটাই কথা বলতে হবে। মহুয়ার মত ঘটনা আমাদের দেশের অনেক মহিলা নেত্রীকে সইতে হয়েছে। তা তিনি শাসক দলেরই হোন বা বিরোধী। পদমর্যাদার হানি, লিঙ্গবাদ, চরিত্রহানি, অশোভন মন্তব্য, বিদ্বেষপূর্ণ জল্পনা, বাতিল করার মনোভাব সহ্য করতে হয়েছে। এই তালিকা অন্তহীন। এক্ষেত্রে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের জন্য যৌনতা এবং দুর্ব্যবহারকে অস্ত্র করা হয়েছে।
এই সরকার যা করেছে এবং এক্ষেত্রে যেভাবে আচরণ করেছে, তার নিন্দা আমরা যদি না-করি, নারী হিসেবে যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না-পারি, তাহলে আমাদের নীরবতা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের জন্য মারাত্মক ফাঁদ বলে প্রমাণিত হবে। সেই সব নারীর জন্য ফাঁদ বলে প্রমাণিত হবে, যাঁরা জনজীবনে উঠে আসার স্বপ্ন দেখেন। গত অধিবেশনে, সরকার মহিলা সংরক্ষণ বিল পাসের মিথ্যে কৃতিত্ব দাবি করেছিল। যা আসলে মহিলাদের নিজেদের সংগ্রামের ফল। কিন্তু এই অধিবেশনে, সরকার একজন মহিলাকে যৌনতাবাদী নিশানা করার নতুন রেকর্ড গড়ার কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে। এটা গণতন্ত্রের জননী সংসদের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। মহুয়া আমাদের দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের দেখানো ভয়ের মুখেও ব্যক্তিগত সাহস এবং শক্তি দেখিয়েছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছেন। কখনও লড়াই থেকে পিছপা হননি বা পিছিয়ে যাননি।
পূর্ববর্তী সাংসদদের বহিষ্কারের নজির উদ্ধৃত করা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভুল। তাঁদের মামলা করার সুযোগ না-দেওয়া, ঐতিহ্য অনুসরণের নামে তাঁর (মহুয়া) বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না-দেওয়া সম্পূর্ণ ভুল। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে, আজতক-এ সম্প্রচারিত অনলাইন নিউজ সাইট কোবরাপোস্টের একটি স্টিং অপারেশন দেখানো হয়েছিল। যেখানে ১১ জন সাংসদ সংসদে প্রশ্ন উত্থাপনের বিনিময়ে নগদ অর্থ গ্রহণ করছিলেন। মামলায় অভিযুক্ত ১১ জন সাংসদের মধ্যে ছয় জন বিজেপি, তিন জন বিএসপি এবং একজন করে আরজেডি আর কংগ্রেসের সদস্য।
আরও পড়ুন- যেন কুবেরের ভাণ্ডার! উদ্ধার অর্থের গণনা অব্যাহত, আনা হল আরও কর্মী-যন্ত্র
তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। যাতে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কমিটি ওই সাংসদদের বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল। লোকসভায় ভোট দেওয়ার সময় বিজেপি ওয়াকআউট করে। প্রেস রিপোর্টে এলকে আদবানিকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল। তিনি তখন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। আদবানি বলেছিলেন যে, ওই সাংসদরা যা করেছিলেন তা ছিল দুর্নীতি। কিন্তু বহিষ্কারের শাস্তি ছিল, 'তার চেয়েও বড় বোকামি'। এটা বিজেপি নিজেদের সাংসদদের বাঁচাতে বলেছিল। তা-ও কোন সময় বলেছিল? যখন সেটা ছিল স্পষ্ট প্রমাণ-সহ একটি ওপেন অ্যান্ড শাট কেস।