সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ঝড় তুলতে প্রস্তুত তৃণমূল, ডিএমকে, আপ। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়, দলের অন্দরে নেতৃত্বের প্রশ্নে বিতর্ক সত্ত্বেও কংগ্রেসও সংসদে বিজেপিকে বিঁধতে কোমর বাঁধছে। এ নিয়ে রবিবার সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে একপ্রশ্থ বৈঠকও করেছে কংগ্রেস নেতারা। বাদল অধিবেশনের মতো এবারও সংসদে তাদের আহ্বানে বিরোধীদের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে আগ্রহী কংগ্রেস। কিন্তু, তাতে সাড়া দেবে কী তৃণমূল, আপের মতো দলগুলি? যা নিয়ে এদিনের বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গিয়েছে, ১০ জনপথে কংগ্রেসের ওয়ার্কিম কমিটির রবিবারের বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী সংসদে বিরোধী জোটের পক্ষে সওয়াল করেন। তখনই সেই জোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। গত কয়েক মাসে দেশের রাজনীতির পরিবর্তন ঘটেছে। আর তা জেরেই সার্বিক বিরোধী ঐক্যের ছবি অন্তত কংগ্রেসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আর সম্ভব নয় বলে জানান খাড়গে।
একুশের বিদানসভা ভোটের পর দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি বিরোধী জোটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী র সঙ্গেও। সেই বৈঠকে ছিলেন রাহুল গান্ধীও। ওই সফরেই শরদ বিরোধী একাধিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন মমতা। তারপরই বাদল অধিবেশনে একাধিক ইস্যুতে সংসদের ভিতর-বাইরে বিরোধী ঐক্যের ছবি ফুটে উেছিল।
কিন্তু, তার মধ্যেই আচমকা বদলে যায় ছবি। কংগ্রেস প্রধান বিরোধী হিসাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলে সোচ্চার হয় তৃণমূল। ভবানীপুর উপনির্বাচন থেকে পরবর্তী এ রাজ্যের একাধিক পুননির্বাচন, রাজ্যব্যাপী পুরভোটেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আপ-ও কংগ্রেস ও বিজেপি-কে একই বন্ধনীতে ফেলে সরব হয়।
এরমধ্যেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট এসে পড়ে। রাজস্থানে এবার বিজেপি, কংগ্রেসের সঙ্গেই সরাসরি লড়াই ছিল আপের। গোয়ায় কংগ্রেস, আপ ও তৃণমূল ছিল পরস্পর প্রতিন্দ্বন্দি। আপ ও তৃণমূল গোয়ায় কংগ্রেসের গেরুয়া বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পাল্টা কংগ্রেস-ও এই দুই দলের বিরুদ্ধে ভোট ভাগ করে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ খাড় করে। রাজস্থানে ব্যাপক সফল আপ। গোয়ায় তৃণমূল একটি আসন না জিতলেও ২টি জিতেছে আপ। আর কংগ্রেসের রক্ষক্ষরণ অব্যাহত।
ফলে গত কয়েকদিনে দেশের রাজনৈতিক বিন্যাস বদলেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপি বিরোধী জোটের ভরকেন্দ্র হিসাবে কংগ্রেসকে মানতে নারাজ আপ, তৃণমূল। গত শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, বিরোধী জোট প্রয়োজন। তবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে নয়। কারণ এই দল সবসময়ই হারছে। আঞ্চলিক দলগুলির নেতৃত্বে পদ্ম বিরোধী জোটের আহ্বান জানান তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে রবিবার রাজ্যসভায় কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার আনন্দ শর্মা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিরোধী দলকে সংসদের অধিবেশনে জোটের প্রস্তাব দেওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলা হোক। কংগ্রেসের তরফে এই কাজ করবেন রাজ্যসভায় কংগ্রেসের চিপ হুইপ জয়রাম রমেশ।
এদিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে আসন্ন অধিবেশনে বিজেপিকে চেপে ধরতে, ইউক্রেন থেকে ভারতী পড়ুয়াদের দেরিতে ফেরানো, ডাক্তারি পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ, বেকারত্ব নিয়ে সরব হবে কংগ্রেস।