এবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে পোস্টার পড়ল তৃণমল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের। সেই পোস্টারে উল্লেখ, 'শুভেন্দুর সঙ্গে তোমাকেও চাই।'
দুর্গাপুর পুরনিগম এলাকার ইস্পাত কলোনীতে বিভিন্ন জায়গায় এই পোস্টার দেখতে পাওয়া গিয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে পোস্টার ঘিরে ইতিমধ্যেই শাসক দলের অন্দরে জোর চর্চা। এবার তাতে নতুন মাত্র যোগ করল শুভেন্দু অধিকারী ও বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের একসঙ্গে পোস্টার।
পোস্টার বিতর্কে বর্ধমানে জোর জল্পনা। এ প্রসঙ্গে সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হলে তাঁকে কিছুটা বেসুর শুনিয়েছে। তৃণমূল সাংসদের জবাব, 'পোস্টার পরেছে জানি। কিন্তু কারা কিভাবে এগুলো দিচ্ছে তা জানি না। এসব দলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।' তাহলে জোড়া-ফুল ছাড়তে পারেন তিনি? এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি সাংসদ। যদিও তাঁর দাবি, 'এতে দলে খারাপ প্রভাব পড়ছে।'
এবার বেসুর তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল। দলীয় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নিয়ে কী বললেন শুনুন।#SunilMandal #TMC pic.twitter.com/tkWvCpxcCp
— Indian Express Bangla (@ieBangla) December 8, 2020
এর আগে দুর্গাপুর নগর নিগমের চার নম্বর বোরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টার পড়েছিল সিটি সেন্টার সহ অনেক জায়গাতে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের চর্চার কেন্দ্রে সুনীল-শুভেন্দু পোস্টার ।
উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস ধরেই অরাজনৈতিক একাধিক সভা করতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। নাম না করেই সেই সভা থেকে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি। শুভেন্দুর সমর্থনে 'দাদার অনুগামী' ব্যানারে পোস্টার রাজ্যের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। নেত্রী বা দলের প্রতীক সবা বা পোস্টারে না থাকায় বিতর্ক বাড়ে। জোড়া-ফুলের অস্বস্তির মাঝেই পাল্টা নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ককে নিশানা করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমরা। ফলে তৃণমূল-শুভেন্দু সম্পর্কে চিড় বৃদ্ধি পায়। পরে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু দল ছাড়েননি। তুঙ্গে ওঠে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার তৃণমূল ত্যাগের জল্পনা।
ভোটের আগে শুভেন্দুকে দল ছাড়লে প্রভূত ক্ষতি বলে সরব হতে দেখা যায় একাধিক তৃণমূল নেতা, বিধায়ককে। ফলে বিধায়কের গোঁসা মেটাতে দল ও শুভেন্দুর মধ্যে দৌত্যের চেষ্টা করেন সাংসদ সৌগত রায়। অভিষেক ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,প্রসান্ত কিশোর ও শুভেন্দু অধিকারী মধ্যে বৈঠকে সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে সৌগত রায় দাবি করেন। কিন্তু তার ১৪-১৫ ঘন্টার মধ্যেই মেসেজে সৌগত রায়কে শুভেন্দু জানিয়ে দেন 'এভাবে চললে একসঙ্গে কাজ করা মুশকিল' বৈঠকের নির্যাস ফাঁস নিয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এরপর শুভেন্দুর কোর্টেই বল ঠেলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
গত শনিবার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়ান রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর দিনই উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সমর্থনে পোস্টার পড়ে। সেখানে তৃণমূল পতাকা বা নেত্রীর নাম ছিল না।
এরপরই দলের 'বিদ্রোহী'দের কড়া বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। সাংগঠনিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, 'থাকতে হলে থাকুন, নইলে লুটেরাদের দিকে চলে যান।' সোমবার মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, 'যদি কেউ মনে করেন তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করব, বার্গেনিং করব, ভোটের আগে তৃণমূলকে দুর্বল করে দেব। তাহলে বিজেপি ও তার বন্ধুদের বলব আগুন নিয়ে খেলবেন না। এভাবে তৃণমূলকে জব্দ করা যাবে না।'
যদিও এতে বিতর্কের রেশ থামছে না। মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে সাংসদ- নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ২১-এ ভোটের আগে এ যেন এক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ঘাস-ফুল শিবির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন