না কোনও ঝুঁকিই নেয়নি পুলিশ। গলির রাস্তার দুদিকে ব্য়ারিকেড দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়েছিল। যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। কিন্তু মিছিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে যেতেই একটু হলেও তাল কাটল। তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এর ডিভাইডার টপকানোর চেষ্টা শুরু করেন। মিছিলের গর্জন তখন বিজেপি দফতরমুখী। মিছিল থেকে বেশ কয়েকটা জুতো এসে পড়ে বিজেপি দফতরের সামনের গেটে। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ আধিকারিকরা সতর্ক হয়ে ওঠেন।
তখন সময় ঠিক দুপুর ১টা ৫০ মিনিট। বিজেপি দফতরের উল্টো দিকে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ দিয়ে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল যাচ্ছে জোড়াসাঁকো অভিমুখে। আর সেই সময় ৬,মুরলি ধর লেনের অফিস নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মোড়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন মিছিলের সামনে হাঁটছিলেন। একবার ডানদিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে পথচারীদের দিকে তাকালেনও। এরপর দলনেত্রী পেরিয়ে যেতেই চিৎকার করে বিজেপি রাজ্য দফতরের দিকে তাকিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে মিছিলের জনতা। পুলিশ অধিকারিক ও সাধারণ পুলিশকর্মীরা তখনই ছুটতে থাকেন ডিভাইডারের দিকে। তৃণমূল নেতৃত্ব তখন কর্মীদের আটকাতে ব্যস্ত।
মিছিল থেকে বিজেপি অফিসের দিকে যেতে উদ্যত হন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁরা ডিভাইাডার টপকে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন জোরকদমে। বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায় ক্ষুব্ধ দলীয় কর্মীদের পথ আটকাতে। সে সময়েই মিছিল থেকে জুতো ছোড়া শুরু হয় বিজেপি অফিস লক্ষ্য করে। ছোড়া হয় জলের বোতল।যেহেতু অফিসটি গলির ভিতরে, তাই গলির সামনের দরজায় লাগে জুতো। তখন মুরলি ধর লেনের গেটের সামনে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। ডিভাইডারে তখন তৃণমূল কর্মীদের সামলাচ্ছেন পুলিশ কর্তা মুরলীধর শর্মা-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। মাঝে মধ্য়েই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। প্রায় ৭ মিনিট ধরে এই কাণ্ড চলতে থাকে। এনআরসি ও বিজেপি বিরোধী স্লোগান চলতে থাকে অবিরাম। কেউ কেউ তখনও ডিভাইডারে উঠে পড়েন। তবে কেউই আর ডিভাইডার পার হতে পারেননি। অবশেষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পুলিশ কর্তারা।
এদিন রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশ থেকে গান্ধিমূর্তি হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী মিছিল শুরু হয়। মিছিল ধর্মতলা, চাঁদনিচক মেট্রো, এয়ার ইন্ডিয়া হয়ে জোড়াসাঁকোতে শেষ হয়। জোড়াসাঁকোতে বক্তব্যও রাখেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন দুপুরে বিজেপি অফিসে তেমন উল্লেখযোগ্য নেতা কেউ ছিলেন না। বিজেপি দফতরের পিছনে কলেজস্ট্রিটের দিকেও তখন কড়া পুলিশি প্রহরা। মুরলীধর লেনের দুদিকের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যাতায়াতে লাগাম টানা হয়েছে।
মিছিল শেষ হওয়ার পরও স্বস্তিতে ছিল না পুলিশ কর্তারা। কারণ মিছিল ফেরত তৃণমূল কর্মীরা ফের বিক্ষোভ দেখাতে পারে বিজেপি দফতরে, সেই আশঙ্কা ছিলই। তাই তৃণমূল কর্মীদের বিজেপি অফিস লাগায়ো সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউর রাস্তার দিকেই আসতে দেয়নি পুলিশ। কিছুটা দূরে মহম্মদ আলি পার্কের সামনে থেকে মিছিল ফেরত জনতাকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তখন আর কোনওরকম ঝুঁকি নেয়নি।