বিজেপির অভিনন্দন যাত্রায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনের থেকে অন্য় রাজনৈতিক স্লোগানই প্রাধান্য পেল বেশি। সোমবারের গেরুয়া মিছিলে চোখে পড়ার মত ভিড় জমিয়ে ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষরা। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সোমবারই বিজেপির সব থেকে বড় মিছিলের সাক্ষী থাকল কলকাতা তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তবে হিন্দ সিনেমা থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ হয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত এদিনের এই মিছিলে সিএএ-এনআরসির সমর্থনে স্লোগানের পরিবর্তে আগাগোড়াই মূলত শোনা গেল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা সরকারকে গোদিচ্যুত করার স্লোগান।
এদিন সকাল থেকেই হিন্দ সিনেমার সামনে আনাগোনা শুরু হয়ে যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। বেলা বাড়তেই হিন্দ সিনেমার আশাপাশের সব রাস্তাই পদ্ম পতাকায় ছেয়ে যায়। তবে দেশের জাতীয় পতাকা নিয়েও অনেকে হাজির হন এই যাত্রায়। দলের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জগত্প্রকাশ নাড্ডা, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় থেকে রাজ্য নেতৃত্ব, সকলেই মিছিলে হাজির ছিলেন। তবে কলেজস্ট্রিটের রাস্তা ছেড়ে সোমবার মিছিল যায় সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ দিয়ে। লোকসভা নির্বাচনে আগে অমিত শাহর মিছিলকে কেন্দ্র করে কলেজ স্ট্রিট-বিধান সরণিতেই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল। ভাঙচুর হয়েছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি। ফলে বিজেপি কর্মকর্তারাও এদিন অনেক সতর্ক ছিলেন। তবে লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন অমিত শাহর মিছিলের থেকে এদিনের মিছিলের ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি।
ডঙ্কা, শিঙার শব্দে এবং সন্তদের উপস্থিতিতে এদিন মিছিলের মেজাজ ছিল চোখে পড়ার মতো। উল্লেখযোগ্যভাবে সোমবারের এই মিছিলে মতুয়াদের একটা বড় অংশ উপস্থিতি ছিল। নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে তাঁরা নিজেদের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে হাঁটেন। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মুহূর্মুহ স্লোগানও দেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। তখন থেকেই মতুয়াদের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব বাড়তে থাকে। এদিকে, নাগরিকত্ব বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর তৃণমূল নেত্রী তথা গতবারের সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরও সেভাবে পথে নেমে বিরোধিতা করেননি। সেই প্রেক্ষিতে সোমবারের মিছিলে মতুয়াদের অংশগ্রহণ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের দিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিশেষ বার্তা দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এদিনের মিছিল ছিল সিএএ এবং এনআরসি সমর্থনে অভিনন্দন যাত্রা। কিন্তু, সেই যাত্রায় 'জয় শ্রীরাম', 'ভারত মাতা কী জয়', 'মমতার সরকার আর নেই দরকারে'র মতো স্লোগান। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নাগরিকত্ব আইনকে অভিনন্দন জানানোই মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গ বিজেপির, কিন্তু মিছিলের স্লোগানের ধরণ মনে করিয়ে দিচ্ছে সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে জয়লাভের লক্ষ্যেই যে গেরুয়া শিবির কোমর বেঁধে নামছে তা স্পষ্ট এই মিছিল থেকে। এই মিছিলের পাল্টা মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল করবে তৃণমূল কংগ্রেস।