সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার বিষয়টি একটা রাজনৈচেক অবস্থান জানান দেওয়া, রাজ্যগুলির হাতে নাগরিকত্ব দেওয়া না দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। এ কথা বললেন বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা শশী থারুর।
সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সাংসদ বলেন, এনপিআর (ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার) এবং প্রস্তাবিত দেশ জোড়া এনআরসি লাগু করতে রাজ্যের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারাই এ কাজ চালাবে, কেন্দ্রের হাতে এ কাজের জন্য লোক নেই।
থারুর বলেন, "এটা অনেকটাই রাজনৈতিক অবস্থান। নাগরিকত্ব দেয় ফেডারেল সরকার এবং কোনও রাজ্যই কাউকে নাগরিকত্ব দিতে পারে না, ফলে লাগু করা বা না করার বিষয়টি তাদের হাতে নেই।"
তিনি আরও বলেন, "রাজ্যগুলি প্রস্তাব পাশ করতে পারে বা আদালতে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবত তারা কী করতে পারে! রাজ্য সরকার বলতে পারে না যে তারা সিএএ লাগু করবে না, তারা যেটা বলতে পারে তারা এনপিআর-এনআরসি লাগু করবে না, কারণ এতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।"
কংগ্রেসের আরেক নেতা কপিল সিবাল গত সপ্তাহে বলেছিলেন কোনও রাজ্য সিএএ লাগু করার ব্যাপারে কিছু করতে পারে না, কারণ সংসদে সিএএ পাশ হয়ে গিয়েছে। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে ঝড় ওঠে সব মহলে। পরে তিনি সিএএ-কে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, তাঁর অবস্থানে কোনও বদল ঘটেনি।
পাঞ্জাবে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। গত সপ্তাহেই সেখানে সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ হয়েছে। বাম শাসিত কেরালা ও তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পশ্চিমবঙ্গে একই কাজ হয়েছে বা হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে থারুরের দল কংগ্রেস সিএএ বিরোধী প্রস্তাবের দাবি করেছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি তা বিধানসভায় আনা হবে।
কংগ্রেস ইঙ্গিত দিয়েছে, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিসগড়ে, যেখানে তারা ক্ষমতায় আছে, সেখানেও একই রকমভাবে প্রস্তাব পাশ করা হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের যে সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করার কথা বলেছে, সে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন থারুর।
তিনি বলেন, "নাগরিকত্বের সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করে এই আইন সংবিধান হনন করেছে... কিন্তু পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ অন্তত সমস্ত সওয়াল জবাব শুনে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করবে। একমাত্র এ রাস্তাতেই আমরা মৌলিক মতপার্থক্যের সমাধান করতে পারব।"
টাটা স্টিল কলকাতা লিটারারি মিটে যোগ দিয়ে থারুর বলেন, "এই আইন নাকচ করার দুটি রাস্তা আছে। এক, যদি সুপ্রিম কোর্ট একে অসাংবিধানিক বলে নাকচ করে দেয়, আর দুই সরকার নিজে যদি এ আইন প্রত্যাহার করে। এখন, দ্বিতীয়টা সম্ভব নয়, কারণ বিজেপি কখনও নিজের ভুল স্বীকার করে না।"
তিনি বলেন, এখন যে বিক্ষোভগুলি চলছে তা স্বতঃস্ফূর্ত এবং সরকার যদি একবার স্পষ্ট করে দেয় যে কোনও ধর্মকে টার্গেট করা হচ্ছে না, তাহলে অনেকেই বিক্ষোভের কারণ হারিয়ে ফেলবেন।
তবে শুধু সিএএ থেকে ধর্মের বিষয়টি বাদ দিলেই চলবে না, সরকারকে আরও কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, "সরকারকে বলতে হবে আমরা জন্মস্থল ও নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন করব না এবং এনআরসি বানাব না।"
দেশ জোড়া বিক্ষোভ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে থারুর বলেন, ভারতীয় রাজনীতিতে ঐক্য খুব সহজ নয়, কারণ কেন্দ্রে অনেকেরই একই অবস্থান থাকলেও তারা রাজ্যে আলাদা অবস্থান নেয়।
কংগ্রেস সম্পর্কে বরাভয় দিয়ে তিনি বলেন, "আমার মনে হয়, বহুবিভক্ত ফ্রন্ট না করে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট করলে লড়াই জোরদার হবে।"
গান্ধী পরিবারের বিষয়ে এবং দলের বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে থারুর বলেন, কংগ্রেস পরিবারে সীমাবদ্ধ নয় এবং শুধু একটা বড় গণ আন্দোলন নয়, সাহবে নতুন ভাবনার সমাহারও।
তিনি বলেন, "আমরা কংগ্রেসকে ভোট দিতে বলি, কেউ পরিবারকে ভোট দেয়, কেউ ব্যক্তিকে ভোট দেয়, কিন্তু সবাই কিছু নির্দিষ্ট নীতি আদর্শকে ভোট দেন।"
থারুর বলেন, কংগ্রেসের রাজনীতিই বিজেপির একমাত্র এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প।
"আমরা শুধু জাতীয় নির্বাচনে হেরেছি। সোয়া চার বছর সময় আছে আমাদের হাতে জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য। এর মধ্যে রাজ্য ভোট রয়েছে... ফলে বিজেপির অযোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য আমাদের হাতে অনেক সময় আছে।"