সংবিধানের মূল কাঠামো ভাঙছে, প্রশয় দিচ্ছে ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতিকে, ভীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মনে, বিরোধীদের এই আক্রমণাত্মক বাক্যবাণের মধ্যে দিয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে লোকসভায় পাস হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)। এই বিলের বিরোধিতা করে বিরোধী দলের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস), যদিও তাদের এই সমর্থন রাজ্যসভায় বিল পাস রোধ করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন:মধ্যরাতে লোকসভায় পাস নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল
এদিকে, বিজেডি, এআইএডিএমকে, ওয়াইএসআরসিপি এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপির 'প্রাক্তন' শরিক শিবসেনা বিলের বিরোধিতা না করায় বিলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি। সোমবার লোকসভায় তুমুল হইচইয়ের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও বিলের একাধিক অংশ নিয়ে বিরোধিতা করে অমিত শাহের কথার মাঝেই সুর চড়ান বিরোধিরা। সেই মন্তব্য কর্ণপাত না করেই শাহ বলেন, "এই সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তাই আমাদের কথাও শুনতে হবে।"
আরও পড়ুন: কেন্দ্র হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অদৃশ্য বিভেদরেখা তৈরি করছে: শিবসেনা
সোমবার বিলের বিপক্ষে কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে সোনিয়া গান্ধী ওয়াকআউটের আগেই ভোটাভুটির নির্দেশ দেন স্পিকার ওম বিড়লা। যদিও বিরোধীদের দাবি মহাত্মা গান্ধী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, স্বামী বিবেকানন্দ এবং বি আর আম্বেদকরের যে যুক্তি দিয়েছিল মোদী সরকার তা তাঁদের আদর্শের পরিপন্থী। বিরোধীদের দাবি, বিজেপির এই পদক্ষেপ ভারতের সংবিধান বিরোধী এবং তা ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে ভেঙে বিজেপির 'হিন্দু রাষ্ট্র' তৈরির পদক্ষেপকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, "যদি এই বিলটি পাস হয় সেক্ষেত্রে মহম্মদ আলি জিন্নার চিন্তাভাবনারই জয় হবে। পাকিস্তানের মতো একই যুক্তি সাজিয়ে পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। আজ একটি সম্প্রদায়ের দিকে আঙুল তুলে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদটিকে ভঙ্গ করা হচ্ছে এবং তাদের আশ্রয় দিতেও অস্বীকার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভারতের মাটিতে বিভাজনের দাগ কেটেছে বিজেপি সরকার, আর আজ ভারতের আত্মাকে ভাগ করছে তারা।"
বিল পেশের পরেই কংগ্রেস-সহ বিরোধিরা বিলের বিপক্ষে সোচ্চার হয়। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলমানদের নিশানা করছে। সংবিধানের ভিত্তি ধ্বংস করছে এই বিল। ধর্ম যাই হোক না কেন মানবতার বজায় রাখা উচিত’’। এদিকে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তরজার মাঝেই বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, "এই সরকার মুসলিমদের ঘৃণা করে, তাই এই বিভাজনের রাজনীতি করছে।"
Read the full story in English