একদিকে পঞ্চায়েত ভোটে দলের কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ, অন্যদিকে আসন্ন লোকসভা ভোটে নিজেদের ঘুঁটি সাজানোর তোড়জোড়, এই দুই বিষয়কেই পাখির চোখ করে এবার খানিকটা রদবদল হল মমতা সরকারের মন্ত্রিসভায়। পঞ্চায়েত ভোটে মন্ত্রীদের পারফরম্যান্স যেমন নজরে ছিল, তেমনই নজরে ছিল রাজনৈতিক সমীকরণ। ঠিক এমন ভাবেই কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটল। কোনও মন্ত্রীর দায়িত্ব বাড়ল তো, কোনও মন্ত্রীর দায়িত্ব কমিয়ে কার্যত যেন সাবধানবাণী দেওয়া হল, কিংবা সেই মন্ত্রীর যে ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, তার আভাস দেওয়া হল। লোকসভা ভোটের আগে ঠিক এমন সাসপেন্স রেখেই কয়েকজন মন্ত্রীর দফতর বদলাবদলি করা হল।
পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন আদিবাসীরা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় দলের দায়িত্বে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জঙ্গলমহলে সেভাবে জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি তৃণমূল শিবির। তাই লোকসভা ভোটের আগে আদিবাসী ভোট টানতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেমস কুজুরকে সরিয়ে আদিবাসী উন্নয়ন দফতর সামলাবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে এই দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। স্বাস্থ্য, ভূমি, ই-গর্ভন্যান্স, উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের পাশাপাশি আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হল চন্দ্রিমাকে। তৃণমূলনেত্রীর বিশ্বস্ত বলেই চন্দ্রিমাকে এই দফতরের প্রতিমন্ত্রী করেছেন মমতা, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন, TMC Rally: তৃণমূল কংগ্রেসে নূতনের আহ্বান?
গত বেশ কয়েকদিন ধরে স্ত্রীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের টানাপোড়েনে দলেও কার্যত কোণঠাসা অবস্থা দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। শোভনের সঙ্গে দলের যে দূরত্ব বাড়ছে, সে গুঞ্জন বহুদিন ধরেই চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার দায়িত্ব থেকেও যে তাঁকে সরানো হতে পারে, এমন ফিসফাসও চলেছে তৃণমূলের অন্দরে। এমনকি, শোভনের পারফরম্যান্স নিয়ে স্বয়ং দলনেত্রী যে খুব একটা সন্তুষ্ট নন, তাও সামনে এসেছে। এবার শোভন চট্টোপাধ্যাকে কার্যত যেন হলুদ কার্ড দেখাল দল। শোভনের হাতে ছিল দমকল, পরিবেশ ও আবাসন দফতর। এবার পরিবেশ দফতরটি হারালেন শোভন। তাঁর হাতে রইল শুধুমাত্র দমকল ও আবাসনের দায়িত্ব।
অন্যদিকে, দলে তরুণ নেতাদের দায়িত্ব বাড়ার পথে যেন একধাপ এগোল তৃণমূল নেতত্ব। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বাড়ানো হল। পরিবহণের পাশাপাশি এবার শোভনের পরিবেশ দফতরও সামলাবেন শুভেন্দু। দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে বড় করতেই কি শুভেন্দুর মতো তরুণ নেতাকে বাড়তি দায়িত্ব বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন, Purulia Update: জোড়া মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর
সদ্য পঞ্চায়েত ভোটে নিজেদের সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছে তৃণমূল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোপে পড়লেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতের পাশাপাশি এই বর্ষীয়ান নেতার হাতে ছিল গ্রামোন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য দফতর। এখন থেকে পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন দফতরের পাশাপাশি জলসম্পদ ও ক্ষুদ্র সেচ দফতর সামলাবেন সুব্রত। শ্রম, আইন ও বিচারের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য দফতরের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হল মলয় ঘটককে। জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর কেড়ে নিয়ে জলসম্পদ ও ক্ষুদ্র সেচের মতো কম গুরুত্বের দফতর সুব্রতকে দেওয়া হল বলে মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল।
মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে ভাল করেছে সেচ দফতর। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেচ ও জলপথের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবার থেকে সেচ ও জলপথের মতো দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব বাড়ানো হল সৌমেন মহাপাত্রের।
পঞ্চায়েত ভোটের পর ও লোকসভা ভোটের আগে মমতা সরকারের মন্ত্রিসভা এহেন রদবদল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। দফতর রদবদল করে দলীয় নেতাদের কার্যত কড়া বার্তাই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনই মত রাজনৈতিক মহলের।