অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে লঙ্কাকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছে বনগাঁ পুরএলাকা। বনগাঁ পুরসভায় বুধবারের সভায় হাজির হতে পারেননি ১১ জন কাউন্সিলর। এরপরই ঘটনা গড়ায় হাইকোর্টে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট এ বিষয়ে রীতিমতা কড়া বার্তা দিল। সরকারের ভুল শোধরানোর দায়িত্ব আদালতের বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। আগামী ২২ জুলাই ফের এই মামলার শুনানী হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিন হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত বলেন, "পুরো মামলাটি মিথ্যার ওপর দাঁড় করানো হয়েছে। পুর আইনের ৫১ এ ধারা অনুযায়ী, কোনও বৈঠকে প্রস্তাব পাশ না হলে সেক্ষেত্রে চেয়ারমজান নোটিস দেবেন। আর বৈঠক হলে সমস্ত সিদ্ধান্ত বৈঠকে যারা উপস্থিত রয়েছেন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে পাশ করাতে হবে। পুরআইনের ধারা ১০- এ বলা হয়নি সবাইকে মিটিংয়ে থাকতে হবে। কোনও বৈঠকে যদি একতৃতীয়াংশ কাউন্সিলর থাকে তাহলে সেই মিটিং বৈধ।" এজি-র এই সওয়াল শুনে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, "যদি সেই মিটিংয়ে সবাইকে আসতে না দেওয়া হয়। অর্থাৎ অনাস্থা যারা ডেকেছে তাদের যদি আসতে না দেওয়া হয়, তাহলে আপনি কি ব্যাখ্যা দেবেন?" এজির উত্তর, "এই সভায় হাজির ছিলেন ১০ জন। তাহলে সেটা কোরাম (এক তৃতীয়াংশ হাজিরা) হয়ে গেল। বিচারপতি তখন বলেন, "যদি আপনার এই বয়ানকে মেনে নিই, তাহলে মানতে হবে এই ১১ জনকে আটকানো হয়েছিল? পুরআইন ১৮তে বলা হয়েছে চেয়ারমজান কীভাবে নিযুক্ত করতে হয়, কিভাবে অপসারিত হয়। চেয়ারমযানের পক্ষে যদি এই প্রস্তাব পাশ হয়ে যায় তাহলে আর ৬ মাসের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না। এজি তখন বলেন, "যদিও ২১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জন এসেছিল, ১১ জন আসেননি। ১১ জন বৈঠকে উপস্থিত না হলে কিছু যায় আসে না। ১০ জনের মধ্যে ৬ জন সমর্থন করলেই তো প্রস্তাব পাশ হয়ে যাবে।"
বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য, "পুরসভার এই বৈঠক শেষ করুন। আপনারা জানেন কীভাবে ১১ জনকে আটকাতে হয়। এটা ভাল শাসন নয়। সরকার ভুল করলে শোধরানোর দায়িত্ব আদালতের।" তিনি আরও বলেন, "যে ১১ কাউন্সিলর বৈঠকে এলেন না , তাঁরাই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। তাহলে কি সেটা বিশ্বাস করা যায়!" তখন আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী জয়দীপ কর বলেন, "মিটিং আপনার নির্দেশ অনুযায়ী আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু যারা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তাদেরই মাটিংয়ে ডাকা হয়নি।" এই শুনে বিচারপতি বলেন, "এভাবে আপনারা কাউন্সিলরদের কন্ঠ রোধ করতে পারেন না।" এই মামলার পরবর্তী শুনানী ২২ জুলাই।