৬০ দিনের বেশি সময় ধরে জাতিগত হিংসায় ছাড়খার মণিপুর। এর মাঝেই হিংসার ঘটনায় আন্তর্জাতিক যোগের সম্ভাবনা নিয়ে সরব হলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি কেন পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন সেই বিষয়েই মুখ খুলেছেন। একই সঙ্গে এন বিরেন সিং রাজ্যে অশান্তির আবহে রাহুল গান্ধীর সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। একইসঙ্গে রাজ্যে চলমান হিংসায় আন্তর্জাতিক মদতের প্রশ্নকেও একেবারে উড়িয়ে দেননি তিনি। মণিপুরে চলমান হিংসার মধ্যেই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং নিজেও সেদিন পদত্যাগ পেশ করতে গিয়েছিলেন তবে তার সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন দেখে তিনি তার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন। শনিবার (১ জুলাই) এমনই দাবি করেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। রাজ্যে সহিংসতার পিছনে কারা থাকতে পারে। পাশাপাশি কংগ্রেস রাহুল গান্ধীর সফরের সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এন বীরেন সিং মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন যে ‘আমি দেখেছি যে মানুষের সমর্থন আমার সঙ্গেই রয়েছে। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি মণিপুরের মানুষের জন্য কাজ করে যাব’। মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৪০টির বেশি কোম্পানি রাজ্যে রয়েছে। খাদ্য সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ চলছে জোরকদমে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, হিংসার আবহে রাজ্যের কিছু জায়গায় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অমিত শাহের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো, বিজেপি অফিসে হামলার চেষ্টা দেখেছি। এটা দেখে আমার মনে হয়েছে যেআমরা জনগণের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। যার কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর বুঝতে পেরেছি যে জনগণের আস্থা এখনও আমার উপর রয়েছে। আমি যা ভাবছিলাম বাস্তব তা নয়।
রাজ্যে হিংসার ঘটনায় কোন আন্তর্জাতিক মদতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন নি মুখ্যমন্ত্রী। বরং তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যে হিংসার কারণ হতে পারে কোন আন্তর্জাতিক সংগঠনের ভূমিকা। মণিপুর মাইনামারের প্রতিবেশী রাজ্য। কাছেই চিন। এখন যা ঘটছে তা দেখে, আমরা আন্তর্জাতিক মদতের সম্ভাবনা অস্বীকার বা নিশ্চিত করতে পারি না। এটি পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনাও হতে পারে।
হিংসার কারণের প্রশ্নে বীরেন সিং বলেছেন ‘আমি নিজেও বিভ্রান্ত’। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মণিপুর সফর সম্পর্কে, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে আমরা কাউকে আটকাতে পারি না, তবে এখন ৬০ দিন হয়ে গেছে। তিনি আগে আসেনি কেন? আমার মনে হয় না সময়টা সঠিক ছিল ওনার আসার পক্ষে। মনে হচ্ছিল তিনি কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে এসেছেন।
রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থতার অভিযোগ এবং তাঁর পদত্যাগের দাবিতে এন বীরেন সিং বলেন, 'এই সমস্যাগুলি কোথা থেকে এসেছে? এগুলি আজকের সমস্যা নয়। কংগ্রেসের মতো যারা অভিযোগ করছে, তারা এর বীজ বপন করেছিল। এর পিছনে কার দোষ ছিল সারা বিশ্ব জানে। কুকি এবং মেইতেইয়ের মধ্যে জাতিগত দ্বন্ধের শুরুটা জানা দরকার'। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সবকিছু করছি। কয়েক ঘন্টা আগে আমি আমার কুকি ভাই বোনদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। আমাদের অগ্রাধিকার হল মণিপুরে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা।