আগামী বছর পাঞ্জাবে বিধানসভা ভোট। রাজ্যকে হাতের দখল মুক্ত করতে মরিয়া বিজেপি। কিন্তু, কৃষক আন্দোলন ঘিরে গেরুয়া উদ্যোগ আদৌ সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন খোদ বিজেপি নেতারাই। কিন্তু, কংগ্রেসের অন্দরের ডামাডোল, ক্যাপটেনের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়া ও অমরিন্দর সিংয়ের সিধু বিরোধীতাকে পুঁজি করে হালে পাঞ্জাব দখলের স্বপ্ন উস্কে উঠেছে পদ্ম নেতৃত্বের মনে।
জাতীয়তাবাদ, দেশ প্রেমের কৌশলেই আপাতত পাঞ্জাব জয়ের গেম-প্ল্যান তৈরি করেছে বিজেপি। এক্ষেত্রে পদ্ম বাহিনীর বড় হাতিয়ার নভজ্যোত সিং সিধুর পাকিস্তান 'প্রেম' ও কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতির সমন্ধে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা হাত শিবিরের অন্যতম নেতা অমরিন্দর সিংয়ের বিরোধী মন্তব্য। গেম প্ল্যান সফল করতে এখন ক্যাপটেনকে কংগ্রেসের 'নোংরা খেলা'র বলি বলে তুলে ধরছে বিজেপি। অর্থাৎ, ক্রমেই দেশপ্রেম, জাতীয়বাদকেই চাগিয়ে তুলে ভোটের পালে হাওয়া কাড়চে সচেষ্ট বিজেপি নেতৃত্ব।
তৎকালীন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের নিষেধ সত্ত্বেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শপথে গিয়েছিলেন সিধু। সেদেশের সেনা প্রধান জেনারেল কামার বাজওয়াকে আলিঙ্গন করতেও দেখা যায় তাঁকে। যা নিয়ে সরব হয় বিজেপি। অসন্তোষ চেপে রাখেননি ক্যাপটেনও। মুখ্যমন্ত্রিত্বের কুর্সি যাওয়ার পর অমরিন্দরের নিশানায় এখন শুধুই সিধু। রাখঢাক না করেই দলের প্রদেশ সভাপতিকে দেশের পক্ষে 'বিপদজনক' বলে দেগে দিয়েছেন তিনি। সিধু যাতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী না হতে পারেন তার জন্য নিজের স্বার্থত্যাগ করেও যা করার করবেন বলে ঘোষণা করেছেন ক্যাপটেন।
হাত শিবিরের এই দ্বন্দ্বকেই আপাতত আরও চওড়া করে জনমানসে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। সিধুর বিরুদ্ধে অমরিন্দরের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে জাতীয়বাদের জিগির তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। ক্যাপটেনের মন্তব্য টেনেই সিধুর পাকিস্তান 'প্রেম' ইস্যুতে ফের কংগ্রেসকে বিঁধছে বিজেপি। কেন কংগ্রেস হাইকমান্ড পাকিস্তান 'প্রেমী'কে রাজ্যের সভাপতি করল ক্যাপটেনের ঢঙেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাঞ্জাবেরর বিজেপি সভাপতি অশ্বিনী শর্মা থেকে শুরু করে প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভীজ, দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুগরা।
আরও পড়ুন- ভবানীপুর ভোট-মামলা: কমিশনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট, রায়দান স্থগিত
হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভীজের কথায়, 'দেশ বিরোধী যড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পাকিস্তান ও এ পারের পাঞ্জাবকে এক করতে যিনি উদ্যোগী সেই সিধুর বিরুদ্ধে বলেছেন দেশ প্রেমী ক্যাপটেন অমরিন্দর সিং। কিন্তু তাতেও সনিয়া, রাহুল গান্ধীর সম্বিত ফেরেনি। এটা কংগ্রেসের গভীর ষড়যন্ত্র। ক্যাপটেনের কথায় ওদের সব যড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল, তাই তাঁকেই নোংরা খেলার বলি করা হল।'
'প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সিধু দেশের কাছে বড় বিপদ। তাহলে সীমান্তবর্তী এর রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদে কেন সনিয়া, রাহুল গান্ধী নভজ্যোত সিং সিধুকে বাসলেন? এর নেপথ্যে কোনও ষড়ন্ত্র থাকতে পারে।' এমনটাই দাবি বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুগের।
পাঞ্জাবেরর বিজেপি সভাপতি অশ্বিনী শর্মার আর্জি, 'ইমরান খানকে বন্ধু ও বাজওয়াকে জড়িয়ে ধরার সময় সুধি বরং কাশ্মীরে পাক সেনাদের হামলা বন্ধ করার কথা বলুন ওদের।'
উল্লেখ্য, ১৮ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়েন অমরিন্দর সিং। তারপর দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও বিজেপিকে আক্রমণ করেননি তিনি। বর্তমানে আবার ক্যাপটেনকে কার্যত কংগ্রেসের অব্যন্তরীণ রাজনীতি শিকার বলে তুলে ধরছে গেরুয়া বাহিনী। এই দুইকে এক করে জোর জল্পনা যে হয়তো পদ্ম পতাকা ধরতে পারেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন