Advertisment

সতর্ক কংগ্রেস! অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে চড়ছে পারদ, দলের কী অবস্থান?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার (২৭ জুন) ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (ইউসিসি) পক্ষে কথা বলার সময় বিরোধী দলগুলির উপর তীব্র আক্রমণ করেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Congress Parliamentary Party, Sonia Gandhi, Narendra Modi, Uniform Civil Code, Congress, Law Commission, Law Commission of India, Indian Express, India news, current affairs"

বৈঠকে কংগ্রেস সংসদীয় দলের সভাপতি সনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও উপস্থিত ছিলেন।

সামনেই লোকসভা নির্বাচন। ঠিক তার আগেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে নিয়ে দিল্লিতে চড়তে শুরু করেছে পারদ। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা কেন্দ্রের হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে আসন্ন বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রকে ঘেরাও করতে রণকৌশল নির্ধারণে জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে দল। এই নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান কী? ভোপালে এক দলীয় কর্মসূচীতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সরব হন খোদ মোদী। তারপর থেকে দিল্লি থেকে শুরু করে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে এই নিয়ে চর্চা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, আসন্ন বাদল অধিবেশেনেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে সংসদে। আর তার আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। 

Advertisment

কংগ্রেস ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আসন্ন বাদল অধিবেশনের কৌশল তৈরি করেছে দলের সিনিয়র নেতারা। অভিন্ন দেওয়ালি বিধি সহ একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রকে আক্রমণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে দল। দলের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ জানান, ‘এই মুহূর্তে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার পক্ষে নয় কংগ্রেস। তবে এই নিয়ে সংসদে বিল বা খসড়া পেশ হলে এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে নিজেদের মনোভাব ব্যক্ত করবে দল’।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ আরও জানিয়েছেন, 'দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও পাটনায় অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলির বৈঠকের বিষয়ে ইতিমধ্যেই দলের সাংসদদের জানিয়েছেন। কুস্তিগীরদের ওপর দিল্লি পুলিশের বর্বরতা থেকে শুরু করে রেল সুরক্ষা, একই সঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মত একাধিক বিষয় নিয়ে দল আসন্ন বাদল অধিবেশনে সরব হবে'।

কংগ্রেস শনিবারও ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) নিয়ে তার অবস্থানে অটল রয়েছে এবং দল স্পষ্ট করেছে বলেছে যে এই মুহুর্তে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার পক্ষে নয় দল। সংসদে এ বিষয়ে কোন খসড়া বা বিল পেশ করা হলে দলের তরফে মন্তব্য করা হবে। শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্ব সংসদীয় কৌশল নির্ধারণে একটি বৈঠক করেছে, যেখানে ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংসদের বাদল অধিবেশনের সময় উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।

কংগ্রেস মণিপুর হিংসা, কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ, মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং বিভিন্ন রাজ্যপালদের আচরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন ‘দল ইতিমধ্যেই ১৫ জুন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং ইউসিসি সম্পর্কে কংগ্রেসের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি’।

বৈঠকে কংগ্রেস সংসদীয় দলের সভাপতি সনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও উপস্থিত ছিলেন। মণিপুর হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নীরবতা নিয়ে দলের তরফে মদীকে চূড়ান্ত আক্রমণ করা হয়। হিংসার দুই মাস পরেও মণিপুর নিয়ে নীরবতা ভাঙেননি মোদী। পাশাপাশি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি ফের উঠে এসেছে দলের তরফে।  

সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এদিন আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নীরব এবং আমরা তাকে এই বিষয়ে নীরবতা ভাঙতে বারবার অনুরোধ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর অবিলম্বে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে এন বিরেন সিংকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। দল মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার দাবি জানাবে। সাংসদ হিসেবে রাহুল গান্ধীর অযোগ্যতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জয়রাম রমেশ বলেন, ‘বিষয়টি বিচারাধীন এবং দল আশাবাদী যে ন্যায়বিচার হবে এবং রাহুল গান্ধী অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন’।

পাশাপাশি আসন্ন বাদল অধিবেশনে রেল সুরক্ষা বিষয়টিও উত্থাপন করবে কংগ্রেস। সংসদ ভবনের উদ্বোধণ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না করার বিষয়টিও দলটি আসন্ন বাদল অধিবেশনে তুলে ধরবে। একই সঙ্গে আদানি ইস্যুতে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (জেপিসি) তদন্তের জন্য দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জয়রাম রমেশ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার (২৭ জুন) ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (ইউসিসি) পক্ষে কথা বলার সময় বিরোধী দলগুলির উপর তীব্র আক্রমণ করেছেন। মোদী এদিন বিরোধী দলগুলিকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কীভাবে ‘দ্বৈত ব্যবস্থা’ নিয়ে দেশ চলবে। এই ইস্যুতে মুসলমানদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যের পর দেশে রাজনৈতিক তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি ইউনিফর্ম সিভিল কোড দেশে কার্যকর হলে লিঙ্গবৈষম্য দূর হবে, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাকার পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়ন বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সুপ্রিম কোর্ট বারবার ‘ ইউনিফর্ম সিভিল কোডের’ পক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু যারা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে তারা এর বিরোধিতা করছে। এক দেশে কিভাবে দুই ব্যবস্থা থাকতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোদী। বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুষ্টি ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির পরিবর্তে সন্তুষ্টির পথে হাঁটবে। মোদী আরও বলেন, ‘ভারতীয় মুসলমানদের বুঝতে হবে কোন রাজনৈতিক দল তাদের উস্কানি দিয়ে তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে’। তিনি বলেছিলেন যে ‘বিরোধীরা আমাদেরকে দোষারোপ করে, তারা মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের লক্ষ্যে মুসলমানদের যোগ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন। তারা যদি সত্যিকার অর্থে মুসলমানদের স্বার্থে কাজ করতেন তাহলে মুসলিম পরিবারগুলো শিক্ষা ও চাকরিতে পিছিয়ে থাকত না। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে কিছু লোকের তুষ্টির নীতি দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক’। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সব ধর্মের মানুষ বিয়ে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে একই আইন মানতে বাধ্য হবে’।

এরপরই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল বলেছেন ‘কেন প্রধানমন্ত্রী মোদি বেকারত্ব, দারিদ্র্য, মুদ্রাস্ফীতি, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন না। মণিপুর ৬০ দিন ধরে জ্বলছে, এমনকি তিনি একবারও শান্তির আবেদন করেননি। এসব বিষয় থেকে দৃষ্টি সরাতে তারা এমন কাজ করছেন মোদী’।

কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারপারসন সনিয়া গান্ধীর সভাপতিত্বে এবং দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের এদিনের বৈঠকে রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে ছাড়াও, বৈঠকে পি চিদাম্বরম, সালমান খুরশিদ, মণীশ তেওয়ারি, শশী থারুর, প্রমোদ তিওয়ারি, রণদীপ সুরজেওয়ালা, শক্তিসিংহ গোহিল, দীপেন্দর হুডা এবং সৈয়দ নাসির হুসেনের মতো সাংসদ এবং নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংসদের দাবল অধিবেশনের দলের কৌশল দৃঢ় করার জন্যই অনুষ্ঠিত হয় এদিনের বৈঠক।

CONGRESS Uniform Civil Code
Advertisment