ভোটের বাদ্যে কাঠি পড়তে আর বেশি দেরি নেই। তাই ফের সিবিআইয়ের ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ল সারদা-কাণ্ডের বেড়াল। জিইয়ে থাকা সারদা-তদন্ত ফের চাঙ্গা। সারদা ও রোজ ভ্যালিতে জড়িয়ে পড়া নেতাদের ডাকাডাকি তো হবেই। অভিজ্ঞমহলের মতে, তার আগে রাজ্যের এক ঝাঁক আইপিএসকে তলব করে দরজায় টোকা দেওয়ার কাজ শুরু করল সিবিআই। এবারে প্রশাসনিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করা শুরু করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী। সারদার লোপাট করা তথ্য উদ্ধার করতে মরিয়া সিবিআই, তাই প্রমাণ করতে চাইছে তারা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডারেল ফ্রণ্ট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, এনআরসি নিয়ে লাগাতার বিজেপি বিরোধিতা, এসবের পালটা কোনও না কোনও চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তবে সারদা-কাণ্ডের তদন্ত হাতে নেওয়ার পরই সিবিআই অভিযোগ করেছিল, বহু তথ্যপ্রমান লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই অভিযোগের তির ছিল রাজ্য প্রশাসনের তৈরি সিটের ওপর। যার কর্তা ছিলেন বর্তমান কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।
২০১৪ লোকসভা ও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সারদা চিটফাণ্ডের তদন্ত নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল সিবিআই ও ইডি। এমনকী রোজ ভ্যালির তদন্তও অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রয়োজন পড়লেই ফের চেগে উঠবে রোজ ভ্যালিও। তাছাড়া একাধিক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। রয়েছে সানমার্গ, সিলিকন, এমপিএস, প্রয়াগ, টাওয়ার সহ একাধিক চিটফান্ডের তদন্ত। সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা এরা হজম করেছে তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এই সব বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে তথ্যপ্রমান জোগাড় করছে সিবিআই। চিট ফান্ড ইস্যুতে যাঁদের নাম এখনও শোনা যায়নি এমন অনেককেই সিবিআই ডাকতে চলেছে। এমল ব্যাপারে অনে নথিও যোগাড় করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগে ওই নতুনদেরও তলব করতে চলেছে সিবিআই।
আরও পড়ুন: সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের চার আইপিএসকে তলব সিবিআইয়ের
অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, চিটফান্ড তদন্তগুলো যখন প্রয়োজন মনে করছে তখনই ব্যবহার করছে কেন্দ্র। তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের বরাবরের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে। সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি), আয়করসহ নানা কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তাঁদের পিছনে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এ রাজ্যের শাসকদলের। বিশেষ সূত্রের খবর, দুর্গাপুজো পার হতেই চিটফান্ড-কাণ্ডে অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তলব করা শুরু করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মেদিনীপুরের জনসভায় চিটফান্ডে জড়িত বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তির ছুঁড়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মেয়ো রোডের জনসভায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সারদা, রোজ ভ্যালির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এর আগে দেখা গিয়েছে যতবার বিজেপি নেতৃত্ব চিটফান্ডের কথা বলেছেন, তারপরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিবিআই। সিবিআই তলব করেছে বিভিন্ন ব্যক্তিকে, অন্য দিকে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফের সেই চিত্রনাট্য শুরু হওয়ার পালা।
সারদা-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে রয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের। তাঁকে একবার সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই টানা জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। তখন তিনি ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৬ বিধানসভার আগে তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হাতে তথ্য থাকতেও কিছু করতে পারেননি বলে হাত কামড়েছেন ওই মামলায় যুক্ত তদন্তকারী হরিয়ানার এক সিবিআই আধিকারিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, “তখন তৃণমূলে মমতার পরেই ছিল মুকুল রায়ের স্থান। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তৃণমূলের ক্ষতি হত। কিন্তু ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের লাভের গুড় খেয়ে নিত বামফ্রণ্ট ও কংগ্রেস জোট।’’ সেই সময় এই আশঙ্কা তাড়া করে বেরিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বকে। কোনও মতেই তৃণমূলের হাত থেকে বাম-কং জোটের হাতে রাজ্যের ক্ষমতা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হোক তা চায়নি গেরুয়া শিবির। তাহলে এরাজ্যে ক্ষমতার বিস্তার করা আরও কঠিন ছিল বলেই বিজেপির একাংশ মনে করেছিল।
২০১৪ লোকসভা, ২০১৬ বিধানসভা। এবার ২০১৯ লোকসভা। কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই গেরুয়া শিবিরের। দলের প্রধান অমিত শাহ টার্গেট বেধে দিয়েছেন ২২ টি লোকসভা আসনের। বিজেপি রাজ্য নেতারা ভাল করেই জানেন এখন যা রাজ্যের পরিস্থিতি তাতে ওই আসন পাওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা জানে না এমন নয়। ইতিমধ্যে বিজেপি অফিসেও কানাঘুষো শুরু হয়েছে। সিবিআই-ইডিও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সূত্রের খবর, আইপিএসরা সিবিআই দপ্তরে না এলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
চিট ফান্ড-কাণ্ডে সিবিআই তলবের পারদ কবে থেকে চড়াবে সেটাই এখন দেখার।