ভারতীয় রাজনীতিতে নক্ষত্রপতন! ৯৫ বছর বয়সে প্রয়াত পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং শিরোমনি আকালি দলের প্রাণ পুরুষ প্রকাশ সিং বাদল। ৬৬ বছরের রাজনৈতিক কেরিয়ারের সমাপ্তি! প্রকাশ সিং বাদলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে। প্রকাশ সিং বাদল ১৯৭০-৭১, ১৯৭৭-৮০ এবং ২০০৭-২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন। এমন এক বর্ণময় রাজনীতিকের মৃত্যুতে কেন্দ্র তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভারতজুড়ে ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালনের ঘোষণা করেছে। ২৬ এবং ২৭ এপ্রিল দু'দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে বলেই কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোহালির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৯৫ বছর বয়সে পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল প্রয়াত হন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। ভারতের রাজনীতিতে তাঁর ‘মর্যাদা’কে সম্মান জানাতে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর মৃত্যুতে দুই দিনের ‘রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। হতে চেয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কিন্তু আকালি নেতা জিয়ানি কর্তার সিংয়ের অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত।
কংগ্রেসের টিকিটে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী
পিতা রঘুরাজ সিংয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, প্রকাশ সিং বাদল গ্রামের সরপঞ্চ হন। এখান থেকেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে তিনি হাত পাকাতে থাকেন রাজনীতিতে। এরপরই তিনি দীর্ঘ ব্লক কমিটির চেয়ারম্যান পদেও তিনি আসীন ছিলেন। মজার বিষয় হল, তিনি কংগ্রেসের টিকিটে ১৯৫৭ সালে পাঞ্জাব বিধানসভায় তার প্রথম নির্বাচন জেতেন। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উজাগর সিংকে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন। সর্বকনিষ্ঠ ও সর্ধাবিক বেশি বয়সি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ‘গৌরব’ ছিল তাঁর মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই তিনি ১৯৭০ সালে প্রথমবারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদ ছিল খুবই কম সময়ের। তিনি ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী হন ১৪ মাসের জন্য তিনি কুর্সিতে বসেন। শুধু তাই নয়, তিনি ৯০ বছর বয়সে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হিসাবে তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি পাঁচবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান।
বাড়িতেই প্রাথমিক ‘শিক্ষা’র হাতেখড়ি। এরপর লাম্বি গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি হন তিনি। কথিত আছে, তিনি তার গ্রাম থেকে ঘোড়ায় চড়ে স্কুলে যেতেন। তিনি মনোহর লাল মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে দশম শ্রেণি পাস করে লাহোরের শিখ কলেজ ভর্তি হন কিন্তু পরে ফোরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর ছেলে সুখবীর সিং বাদল এবং পুত্রবধূ হরসিমরত কৌর বাদল, দুজনেই রাজনীতিতে সক্রিয়।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ট্যুইট করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ট্যুইটে শোকবার্তা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। লেখেন, 'প্রকাশ সিংহ বাদলজির প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। ভারতীয় রাজনীতির এই দিকপাল আমাদের দেশগঠনেও অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। পঞ্জাবের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য’।
পঞ্জাবের নবীনতম এবং প্রবীণতম মুখ্যমন্ত্রী 'প্রকাশ সিংহ বাদলের সাতদশকের রাজনীতিতে পরাজয়ের স্বাদও পেতে হয়েছিল। প্রথমটি ছিল ১৯৬৭ সালে এবং পরেরটি ২০২২ সালে। অমৃতসরে স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানের সময় গ্রেফতার হতে হয় তাঁকে। ৯৯৫ সালে অকালি দলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধেন। কিন্তু বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপির সঙ্গে মতবিরোধের জেরে সেই জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে অকালি দল। প্রতিবাদে নিজের ‘পদ্মবিভূষণও’ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল।