/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/06/chandra-bose1.jpg)
বিজেপির রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই হয়নি চন্দ্র বসুর। এর জন্য মূলত এনআরসি-সিএএ বিরোধিতাকেই দায়ী করছেন নেতাজি প্রপৌত্র। বিজেপি নেতৃত্বের এই পদক্ষেপে চন্দ্র বসু 'অভিমানী' হলেও এখনই দল ছাড়ার কথা ভাবছেন না। উল্টে জানাচ্ছেন, সুযোগ পেলে আগামিতে দলের হয়েই কাজ করতে আগ্রহী তিনি।
গত সোমবার বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নতুন রাজ্য় কমিটির কথা ঘোষণা করেন। এবারের কমিটিতে নির্বাচিত সাংসদদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও আনা হয়েছে। গত কমিটির সহসভাপতি তথা নেতাজি পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকে এবারের কমিটিতে কোনও পদেই রাখা হয়নি। বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়েছে দলের মোর্চাগুলিতেও। তবে মুকুল রায়ের হাত ধরে যাঁরা গেরুয়া শিবিরে এসেছিলেন তাঁদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কমিটিতে। এমনকী নতুন কমিটিতে রয়েছেন লোকসভা ভোটে পরাজিত আইপিএস ভারতী ঘোষও। কিন্তু স্বয়ং মুকুল রায় এখনও দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যই রয়ে গিয়েছেন।
দল থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে চন্দ্র বসু দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'আমি দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে সিএএ-এনআরসি-র প্রতিবাদ করেছিলাম। ভোটের রাজনীতিতে সবাই জিততে চায়। আমি ২০১৬-র বিধানসভা ও ১৯-এর লোকসভাতেই পরাজিত হয়েছি। নেতৃত্ব হয়তো মনে করেছে আমি দলকে জয়ের স্বাদ দিতে ব্য়র্থ। তাই আমাকে রাজ্য় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।' উল্লেখ্য, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতা থেকে তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের কাছে প্রায় প্রায় দেড় লক্ষ ভোটের ব্য়বধানে পরাজিত হয়েছিলেন চন্দ্রকুমার বসু।
নেতাজি পরিবারকে পুঁজি করে ভোট বৈতরণী পারের স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু, সে আশা পূরণ হয়নি। ভোটে জয় না মেলার জন্য অপোক্ত সংগঠনকেই দায়ী করছেন চন্দ্র বসু। তাঁর কথায়, 'নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বিজেপির বড় নেতা। তাঁদের নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। বাকি নেতৃত্ব হয়তো মনে করেছিল নেতাজি পরিবারের সদস্য বলে আমি ম্যাজিক করে দেব। কিন্তু, আমি পারিনি। যেখানে কোনও সংগঠনই নেই সেখানে কিভাবে জয় সম্ভব?' ২০১৬ সালে ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন নেতাজি প্রপৌত্র। সেবার বিজেপির ভোট ৪,৮০০ থেকে বেড়ে হয় ২৭ হাজার।
চলতি বছরের শুরু থেকেই এনআরসি-সিএএ প্রতিবাদে উত্তাল হয় দেশ। তবে, কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি জানিয়েছিল, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এনআরসি লাগু প্রয়োজন। মানবিক কারণে সিএএ বলবৎ হবেই। যদিও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তৎকালীন রাজ্য় বিজেপির সহসভাপতি চন্দ্রকুমার বসু। এই দুই আইনকে 'মুসলিম বিদ্বেষী' ও 'নেতাজির আদর্শের পরিপন্থী' বলে দাবি করেন তিনি।
এনআরসি-সিএএ প্রসঙ্গে নেতাজি প্রপৌত্রের যুক্তি, 'নেতাজির আদর্শ কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে দূরে ঠেলে দিতে শেখায়নি। কিন্তু, এই দুই আইনের মাধ্যমে তাই করা হচ্ছে। এটা কিভাবে সম্ভব? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেছিলেন। সেখানে সব ধর্মের মানুষ ছিলেন। তাই আমি এনআরসি-সিএএ-এর প্রতিবাদ করেছিলাম। যেখানে আইআইটি, আইআইএম-এর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সেখানে কিছু খামতি রয়েছে। যার সমাধান প্রয়োজন। তবে আমার কথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছয়নি বলেই মনে হয়।'
বিজেপির রাজ্য কমিটিতে পদ খুইয়েছেন। তাহলে পদ্মফুল ছেড়ে জোড়া-ফুলের দিকে পা বাড়াতে পারেন নেতাজি পরিবারের এই সদস্য়? শুরু হয়েছে চাপা জল্পনা। এ প্রসঙ্গে চন্দ্র বসুর জবাব, 'মমতার মুসলিম তোষণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।' তাঁর কথায়, 'মোদীজির কাজের ধরন আমার পছন্দের। আমাকে সময় দেওয়া হলে আমি মোদীজি ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। আমি দলের হয়ে কাজ করতে চাই। রাজ্য নেতৃত্ব সেই সুযোগ না দিলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই আমাকে কাজের পরিসর করে দিক।'
দলের রাজ্য কমিটি থেকে চন্দ্র বসুর বাদ পড়া ও পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য় করতে চাননি মুরলীধর সেন লেনের নেতারা। বঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, 'উনি আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেনি। তাই আমাদের এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াও নেই।'
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন