সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস আগামী মাসের গোড়ার দিকে কেরলের পুথুপালি উপনির্বাচনে মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মধ্যেই কংগ্রেস বিধায়ক ম্যাথিউ কুজলনাদান আরেকটি যুদ্ধফ্রন্ট খুলেছেন। কংগ্রেস বিধায়ক গত বছর ২০২০ সালের সোনা চোরাচালান মামলায় মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের পরিবারকে নিশানা করেছিলেন। বিজয়নের কন্যা বীণা এবং তাঁর তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা এক্সলজিক সলিউশনের বিরুদ্ধে তার লাগাতার তোপ এখন ফের সংবাদ শিরোনামে ফিরে এসেছে।
ম্যাথিউ কুজলনাদান প্রথমবারের বিধায়ক। এর্নাকুলাম জেলার মুভাত্তুপুজা এলাকার প্রতিনিধি। আয়কর বিভাগের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড ফর ডাইরেক্ট ট্যাক্সের একটি রিপোর্টের পর বীণা বিজয়নের নাম সামনে আসে। জানা যায়, বীণার এক্সালোজিক কেরল-ভিত্তিক কোচিন মিনারেলস অ্যান্ড রুটাইল লিমিটেড থেকে ১.৭২ কোটি টাকা পেয়েছে। তিন বছর ধরে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। বীণার সংস্থার কাজ ছিল আইটির দায়িত্ব সামলানো এবং পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু, কোনও কাজই করেনি তাঁর এক্সলজিক সলিউশন।
৪৫ বছর বয়সি বিধায়ক ম্যাথিউ কুজলনাদান আগেই জানিয়েছেন যে তিনি কেরলে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে 'সমঝোতার রাজনীতি'র বিরোধী। অভিযোগ করেছিলেন, সিপিএমে তাঁর বাবার জন্যই রীতিমতো রাজনৈতিক কারণে বীণার সংস্থাকে অর্থ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সিপিএম এবং সরকার কুজলনাদানকে পালটা নিশানা করেছে। তাঁর সংগৃহীত সম্পদের উৎস নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তাঁর ধান ক্ষেতের ওপর সমীক্ষা করেছে। তাঁর একটি রিসর্ট ভূমি আইন লঙ্ঘন করেছে, এই অভিযোগে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, বিধায়কের নির্বাচনী হলফনামায় তাঁর প্রকৃত সম্পদের তথ্য গোপন করে যাওয়া হয়েছে। কুজলনাদানের দুর্দশা বাড়িয়েছে কেরলা বার কাউন্সিল। তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, কেন তিনি বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম লঙ্ঘন করে ব্যবসা এবং রিসর্ট পরিচালনা করছেন? তারপরও লড়াই ছাড়তে নারাজ কুজলনাদন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, 'সরকারকে তদন্ত করতে দিন। আমি বর্তমান এলডিএফ সরকারের দুর্নীতি ফাঁস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
কংগ্রেস বিধায়ক কুজলনাদান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনে পিএইচডি করেছেন। বিভিন্ন সংস্থা তাঁর থেকে আইনি পরামর্শ নেয়। কেরলে কংগ্রেস দলের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির সময় থেকে যোগাযোগ কুজলনাদানের। তিনি কেরলের কংগ্রেস ছাত্র সংগঠন কেরল স্টুডেন্টস ইউনিয়নে (কেএসইউ) যোগ দিয়েছিলেন। তখন তিনি আইন পড়ছেন। কেএসইউ রাজ্য সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুব কংগ্রেসের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাহুল গান্ধী তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন। কুজলনাদান জাতীয় স্তরে কেরলের শীর্ষ যুব নেতাদের একজন। তিনি যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন। পরে, অল ইন্ডিয়া প্রফেশনাল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি হন।
আরও পড়ুন- মাকে বলা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের শেষ কথাগুলোর অন্যতম ছিল, ‘আমি ভালো নেই’
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, কংগ্রেস নেতৃত্ব যখন প্রজন্মগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কুজলনাদানকে প্রার্থী করা হয়। তিনি সিপিআইয়ের বিধায়ক এলডো আব্রাহামকে পরাজিত করে মুভাট্টুপুজায় জয়ী হন। বর্তমানে কংগ্রেস রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক কুজলনাদন তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের কথা শোনার জন্য গত বছর একটি মহা পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছিলেন। যখন বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ ওঠে যে বিধায়কদের জেতার পর আর টিকি দেখা যায় না, সেই সময় কুজলনাদান প্রতি তিন মাসে একবার করে তাঁর নির্বাচনী এলাকার সমস্ত পঞ্চায়েতে যান মানুষের অভিযোগ শুনতে। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, 'একজন বিধায়কের তাঁর স্থানীয় বাসিন্দাদের খোঁজ-খবর রাখা উচিত।'