রাফাল চুক্তিকে হাতিয়ার করে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে কংগ্রেস। এদিন রাজ্য় কংগ্রেস দপ্তরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম তোপ দাগেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। এর আগে রাহুল গান্ধি একাধিকবার রাফাল চুক্তি নিয়ে সরব হয়েছেন। এই ইস্য়ুকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চায় কংগ্রেস। রাফাল চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্ত দাবি করেন চিদাম্বরম।
১৯৮৯ সালে শুধু বোফর্স কামানের ওপর ভরসা করে রাজীব গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেসকে গদিচ্য়ুত করেছিল বিরোধী জোট। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ভিপি সিং। সেই লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশ জুড়ে বিরোধীরা একটাই প্রচার করেছিল বোফর্স কেলেঙ্কারির কথা। বোফর্স কামান কেনার চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। এক বোফর্সই কংগ্রেসের কফিনে পেরেক পুঁতে দিয়েছিল। রাজনীতির পরিবারের সন্তান রাহুল সেদিনগুলোর কথা নিশ্চয় ভুলে যাননি। অভিজ্ঞমহলের মতে, সেদিনের সদ্য় যুবক এখন তাই মোদিকে হঠাতে বেছে নিয়েছেন রাফাল চুক্তিকে। প্রতিরক্ষা বিষয়টা সাধারণ মানুষের কাছে “সেনসেটিভ’’। তাই এদিন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শে কলকাতায় এসে রাফাল নিয়েই মোদিকে বিঁধলেন চিদাম্বরম।
এদিন রাজ্য় কংগ্রেস সভাপতি অধীর চোধুরীকে পাশে বসিয়ে চিদাম্বরম প্রশ্ন তুলেছেন রাফায়েল চুক্তির বিষয়ে কেন বিরোধীদের অন্ধকারে রাখা হল। তাঁর দাবি, “রাফাল চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করতে হবে। পাবলিক ডিবেটও হওয়া দরকার।’’ তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে একাধিক কমিটিকে। রাফাল ক্রয় নিয়ে কন্ট্রাক্ট নিগোসিয়েশন কমিটি বা প্রাইস নেগোসিয়েশন কমিটিকে পুরো অন্ধকারে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বিষয়ক ক্য়াবিনেট কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করা হয়নি।’’
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্সে বক্তব্য় রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধিও রাফাল নিয়ে তুলোধোনা করেছেন মোদি সরকারে। তাঁর কথায়, ৭০ বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্য়াল বিমান তৈরিতে যুক্ত। কোনও দেনা নেই তাদের। কংগ্রেস সভাপতির প্রশ্ন, কোন উদ্দেশে ৪৫ হাজার কোটি টাকায় দেনায় জর্জরতি রিলায়েন্সকে ওই বরাত দেওয়া হল। বিমান তৈরির কোনও অভিজ্ঞতাও নেই তাদের। ওই সূত্র ধরেই চিদাম্বরমও রাফাল দিয়ে বিঁধলেন মোদিকে। কংগ্রেস কোনও ভাবেই রাফাল ইস্য়ু হাতছাড়া করতে চাইছে না। রাফাল দিয়েই বধ করতে চায় মোদির বিজেপিকে।
কংগ্রেস সভাপতি রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন জার্মানি, লন্ডনে। আর এদিন কলকাতায় সেই সুর শোনা গেল পি চিদাম্বরমের গলায়। ইউপিএ জমানার থেকে বিমানপ্রতি তিন গুণ বেড়েছে চুক্তির টাকা। কংগ্রেসের দাবি, তখন একটি বিমান কেনা হয়েছিল ৫১৬ কোটি টাকায়, এখন মোদির আমলে তার দাম ১৬০০ কোটি টাকা। চিদাম্বরমও কলকাতায় বলেছেন, এত বেশি টাকা দিয়ে কেন চুক্তি করা হল। এভাবে রাফাল নিয়ে সারা দেশে ১০০ শহরে সাংবাদিক বৈঠক করবে কংগ্রেস। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে মোদিকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর কংগ্রেস।