নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র পর এবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রের মোদী সরকার সরকার নতুন করে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল আনতে চলেছে। নয়া এই বিলকে 'ফাঁদ' বলে বর্ণনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের আশ্বাস উড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাবের মাধ্যমে বহু বাঙালি ও হিন্দুদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে।'
সোমবার কোচবিহারের সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহারের সভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, 'কেন্দ্র সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করবে। আমি আপনাদের বলছি এটি-ও এনআরসি-এর মতো একটি ফাঁদ। এই মাধ্যেই বহু বাঙালি ও হিন্দুকে নিজের দেশেই শরণার্থী করা হবে।' আসাম এনআরসি-তে বাদ গিয়েছে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। যার মধ্যে অনেকেই বাঙালি ও হিন্দু। আসাম এরআরসি-র প্রভাব পড়েছে বাংলায়। শরণার্থী হওয়ার আতঙ্কে বহু মানুষ। ভয়ের জেরে ইতিমধ্যেই রাজ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। আসাম লাগোয়া ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যেই স্পষ্ট, বিজেপি বিরোধীতায় আগামী দিনেও শাসক দলের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে এনআরসি ও ক্যাবের বিরোধিতা।
আরও পড়ুন: খড়্গপুর উপনির্বাচনে নিজের ঘরেই কি লুকিয়ে তৃণমূলের বিপদ?
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, 'নিশ্চিন্তে থাকুন। আমরা যতদিন ক্ষমতায় রয়েছি বাংলায় কেউ শরণার্থী হবেন না। অনেক রাজনৈতিক দল ভয় দেখাবে। কিন্তু ওসবে আমল দেবেন না।' তিনি বলেন, 'তৃণমূল সরকারের আসার পরই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। ওদের জন্য ঘর বানানো হয়েছে। কিন্তু, সাত বছরের বেশি এদেশে থাকার মতো কোনও শর্ত-ই দেওয়া হয়নি।' ছিটমহলবাসীদের জন্য রাজ্য প্রাথমিকভাবে ১২০ ফ্ল্যাট বানিয়েছে। যার বেশ কয়েকটির চাবি ছিটমহলের মানুষদের হাতে তুলে দেন মুখ্যমমন্ত্রী।
লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে একটি আসনও পায়নি তৃণমূল। ৮টি আসনই পেয়েছে বিজেপি। হিন্দু শরণার্থীদের সহজেই নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি গেরুয়া শিবিরকে অনেকটাই সহায্য করে নির্বাচনী সাফল্য পেতে বলে মনে করা হয়। কিন্তু, আসাম এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর পরিস্থিতি বদলেছে। সেই তালিকা থেকে বহু হিন্দু, বাঙালির নাম বাদ পড়ায় আতঙ্কে এরাজ্যের নাগরিকরা। পুজো উদ্বোধনে এসে খোদ বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহকে বলতে হয়েছে, 'কোনও হিন্দু ও বাঙালি এরআরসি-এর ফলে শরণার্থী হবে না।' এরপরই এরআসি ও ক্যাবের বিরুদ্ধে আরও সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দল।
আরও পড়ুন: ডানা ছাঁটা হল মন্ত্রী শোভনদেবের, দফতর পেলেন শান্তিরাম ও বিনয়কৃষ্ণ
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল কী?
এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলি থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার ১৯৪৬ ও ১৯২০ সালের আইনানুসারে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠীকে ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রীষ্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।
লোকসভায় এ বিল পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়। ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ করতে চায় মোদী সরকার।
Read the full story in English