১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব পাস করানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। চলতি অধিবেশনের অবশিষ্ট সময়ে দলের সব সাংসদদের সভায় হাজির থাকার জন্য নির্দেশ জারি করল পদ্ম শিবির। মঙ্গলবার বিজেপির সংসদীয় দলের সাপ্তাহিক বৈঠকে এই নির্দেশিকা সমন্ধে জানিয়ে দেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তথা দলের বর্ষীয়ান নেতা রাজনাথ সিং। সূত্রের খবর, বৈঠকে রাজনাথ বলেছেন, এই বিল কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ বিলের মতই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সব সাংসদকেই হাজির থাকতে হবে।
এনআরসি ও ক্যাব নিয়ে সম্প্রতি উত্তর পূর্ব ভারতে নানা প্রশ্ন উঠছিল। এ বিলের ফলে বহুসংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টে যাবে জনবিন্যাসের ধরন, কাজের সুযোগ কমবে, এবং নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই প্রস্তাবিত বিলের খসড়ায় সামান্য বদলের আশ্বাস দেন শাহ। জানিয়ে দেন জনবিন্যাসের ধরন ও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে না। এরপরই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক ফের ক্যাব পাস করানোর তোড়জোড় শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
সংসদীয় দলের সাপ্তাহিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী উপস্থিত ছিলেন না। জানা গিয়েছে, বিজেপি সাংসদদের সংসদের উপস্থিতির হার দেখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। সেই কারণেই বৈঠকে হাজির হননি তিনি। তাই রাজনাথ সিংয়ের রোষের মুখে পড়তে হয় দলীয় সাংসদের। তারপরই দলের নির্দেশের কথা তুলে ধরেন রাজনাথ। বিল পেশের সময় বিরোধীদের হই-হট্টগোলের মুখে পড়তে হতে পারে। সেই সময় বিজেপির সব সাংসদ উপস্থিত না থাকলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে শাসক শিবির। এছাড়া এই বিল পাস করানো গেরুয়া শিবিরের সম্মানের লড়াই। তাই বাধ্যতামূলক 'হাজিরা' নির্দেশকা বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) পাশ করানোর জন্য কেন মুখিয়ে কেন্দ্র?
সম্প্রতি লোকসভায় ভোপালের বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকররের গডসে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সংসদের অন্দরের বিতর্ক বাইরে আসতেইই নানা মহল থেকে সমালোচিত হয় পদ্ম শিবির। বেকায়দায় পড়ে দলীয় সাংসদকে ক্ষমা চাইতে বলে বিজেপি। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে ওই বৈঠকে দলীয় সাংসদদের সতর্ক করেছেন রাজনাথ সিং। পদ্ম শিবিরের এক সাংসদের কথায় বৈঠকে রাজনাথ বলেছেন, 'বিরোধীদের আক্রমণ করা যাবে। কিন্তু, ভাষা ও শব্দ চয়নে বিশেষ সতর্ক হতে হবে। দলের অস্বস্তি যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে।'
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল কী?
এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলি থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে। বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না। এই আইনের আওতায়, ১) যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন অথবা ২) বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন।
উল্লেখ্য, লোকসভায় এ বিল পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়। ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় সরকার সংযত হয় এবং ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি। তাই এবার বিল পাস করাতে মরিয়া মোদী সরকার।
Read the full story in English