মণিপুরের নারী নির্যাতনের সঙ্গে বাংলার তুলনা টানলে চলবে না। বাংলা আর মণিপুরের ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া দেশের কোথাও কোনও নারী নির্যাতন চললেই, তা অন্য কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়ে যায় না। মণিপুর নারী নির্যাতন ও হিংসা ইস্যুতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এমনটাই স্পষ্ট করে দিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। মণিপুরে হিংসা সংক্রান্ত একগুচ্ছ আবেদনের শুনানি চলছে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে। সেই শুনানিতেই বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, 'আমরা সাম্প্রদায়িক হিংসায় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু, নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ হচ্ছে বাংলাতেও। কিন্তু এখানে ঘটনা ভিন্ন। মণিপুর মামলায় আপনার কাছে কোনও পরামর্শ থাকলে বলুন। মণিপুরে যা ঘটেছে তা অন্যত্র ঘটছে বলে আমরা ন্যায়সঙ্গত মনে করতে পারি না।'
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ, দুই জন উপজাতীয় মহিলাকে নগ্নভাবে প্যারেড করা এবং একদল জনতার দুই মহিলাকে 'ভয়াবহ' যৌন নিপীড়নের ভিডিওটি উল্লেখ করে জানিয়েছেন, সময় ফুরিয়ে আসছে। রাজ্যের (মণিপুরের) নিরাময়ের জন্য একটু স্পর্শ প্রয়োজন। আদালত আরও প্রশ্ন তুলেছে, ৪ মে-এর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে পুলিশ কেন প্রথম এফআইআর নথিভুক্ত করতে ১৪ দিন সময় নিল। সর্বোচ্চ আদালত মণিপুর সরকারকে এপর্যন্ত গ্রেফতারের বিষয়ে জানাতে বলেছে। মে মাসের শুরু থেকে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং সাহায্য প্যাকেজ সম্পর্কেও জানাতে বলেছে আদালত।
শীর্ষ আদালত মণিপুরে মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার মোকাবিলায় একটি ব্যবস্থা প্রক্রিয়া গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। জানতে চেয়েছে, মে থেকে মণিপুরে এই ধরনের ঘটনায় কতগুলো এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে? সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, কেন্দ্রের তরফে আদালতে সওয়াল করেন। তিনি জানিয়েছেন যে মণিপুর হিংসার তদন্ত যদি সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণ করে তবে ভারত সরকারের কোনও আপত্তি নেই। প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল, মণিপুরে ৪ মে একটি ভিডিওতে নগ্ন হয়ে প্যারেড করা দুই মহিলার পক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি জানান যে ওই দুই মহিলা এই বিষয়ে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন।
গত ২০ জুলাই শীর্ষ আদালত মণিপুরের ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেছে এবং সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত পার্বত্য রাজ্যে দুই মহিলার নগ্ন হয়ে প্যারেড হওয়ার ভিডিও দেখে 'গভীরভাবে বিরক্ত' হয়েছে। শীর্ষ আদালত বলেছে যে হিংসায় মহিলাদেরকে নিশানা করা 'একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্রে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।' এই ভিডিও বিবেচনা করে ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ কেন্দ্র এবং মণিপুর সরকারকে অবিলম্বে প্রতিকার, পুনর্বাসন এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে এবং গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন- মণিপুর ভাইরাল ভিডিও কাণ্ডে পুলিশকে তুলোধোনা, শীর্ষ আদালতকে কী জানাল কেন্দ্র?
গত ২৭ জুলাই, কেন্দ্রীয় সরকার শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছিল যে সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত মণিপুরে দুই মহিলার নগ্ন হয়ে প্যারেড হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মামলার তদন্ত সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আদালতকে জানিয়েছে যে সরকার 'নারীদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ সহ্য করতে নারাজ।' সচিব অজয়কুমার ভাল্লার দাখিল করা এক হলফনামায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (এমএইচএ) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করার জন্য এই মামলার বিচার মণিপুরের বাইরে স্থানান্তর করার আবেদন করেছে শীর্ষ আদালতের কাছে। মণিপুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।