মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের আমন্ত্রণে কৌশল্যা মন্দিরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সাম্প্রতিক সফর ছত্তিশগড়ের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মঙ্গলবারই ভাগবত ছত্তিশগড়ের আরএসএস কর্মীদের নিয়ে রাজধানী রায়পুর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রখুরি শহরে গিয়েছিলেন কৌশল্যা মন্দির দেখতে। এই মন্দির ভগবান রামের মায়ের নামে উত্সর্গীকৃত একমাত্র মন্দির বলে পরিচিত।
রাম্ভণ গমন পর্যটনের অংশ এই মন্দির। রাম যে বছরগুলো ছত্তিশগড়ে নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন, সেই পথের ওপর ভিত্তি করে এই পর্যটন সার্কিট তৈরি হয়েছে। মন্দিরটি গতবছর (২০২১) সালে বাঘেল-নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার সংস্কার করেছিল। শুধু তাই নয়, বাঘেল গতবছর চন্দ্রখুড়িতেই তাঁর সরকারের দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপনের আয়োজন করেছিলেন।
বাঘেল প্রকাশ্যেই ভাগবতকে কৌশল্যা মন্দির দর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ভাগবত চলতি সপ্তাহের শুরুতে রায়পুরে আরএসএসের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি আরএসএসের কর্মীদের নিয়ে এই মন্দির দর্শন করেন। পরে, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী একটি টুইটে বলেন, 'আমরা মোহন ভাগবতজিকে মাতা কৌশল্যা মন্দিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত যে সেখানে পৌঁছে তিনি নিশ্চয়ই শান্তি অনুভব করেছেন। তিনি নিশ্চয়ই মন্দিরের নতুন রূপ, মা কৌশল্যার ভালবাসা এবং রামের শক্তি উপলব্ধি করেছেন।' তিনি ভাগবতকে একটি গোথান (গোশালা) এবং একটি স্কুল পরিদর্শনের জন্যও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই স্কুলে সম্প্রতি সংস্কৃত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন বাঘেল।
এর আগে আরএসএস গণমাধ্যমে জানিয়েছিল, তারা বাঘেলের আমন্ত্রণের ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাই কংগ্রেস তাদের রায়পুরের নেতা গিরীশ দুবেকে গত সোমবার ভাগবতের কাছে পাঠিয়েছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাতে। আরএসএস প্রথম আমন্ত্রণের কথা অস্বীকার করায় তিনি ফের আমন্ত্রণ জানাতে এসেছেন বলেই জানান দুবে। তিনি বলেন, 'আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে (ভাগবত) আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, আরএসএস গণমাধ্যমে সেই আমন্ত্রণের কথা অস্বীকার করেছেন। তাই আমরা এখানে মোহন ভাগবতকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি।'
আরও পড়ুন- মোদী সরকার সাহায্যে নারাজ, বাধ্য হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পথে ভারতীয় মেডিক্যাল পড়ুয়ারা
ছত্তিশগড় প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুশীল আনন্দ শুক্লা বলেন, 'বিজেপি ধর্ম নিয়ে ঘৃণার রাজনীতি করে। কিন্তু, ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকার তাদের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের রাজনীতি করে দেখাচ্ছে।' পালটা বিজেপি এভাবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার জন্য কংগ্রেসের সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতা ধর্মলাল কৌশিক বলেন, 'তারা (কংগ্রেস) মন্দিরে কারও ব্যক্তিগত দর্শন নিয়ে হইচই করে। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও স্বাগত জানানোর জন্য কেউ ছিল কি? কংগ্রেস সরকার ধর্মকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাচ্ছে। ভাগবত একই দিনে রায়পুরে বিজেপির দ্বারা নির্মিত একটি রাম মন্দিরও পরিদর্শন করেছেন।'
পালটা ছত্তিশগড় প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, 'বিজেপি সব সময় মন্দির, উপাসনালয়গুলো নিয়ে রাজনীতি করে। সমাবেশের জন্য তারা সব সময় ওই ধরনের অঞ্চলকেই বেছে নেয়। আমাদের লক্ষ্যই হল বিজেপিকে ধর্ম, গরু আর ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে ঘৃণার রাজনীতি ছড়াতে না-দেওয়া। আমরা সেই ব্যাপারে সফল হয়েছি।' কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি শুধু মুখেই মন্দির সংস্কৃতির কথা বলে। তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন মন্দিরের সংস্কারের কোনও কাজ হয়নি। পালটা ছত্তিশগড় বিজেপির বক্তব্য,
রমন সিং মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাম্ভণে যাতায়াতের পথ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল।
বিজেপির একথা বললেও অবশ্য বিজেপি নেতা অজয় চন্দ্রকর কৌশল্যা মন্দিরের ঐতিহাসিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী কি আমাদের বলতে পারবেন কীভাবে তিনি জানতে পারলেন যে কৌশল্যার জন্ম কোথায়? শাস্ত্রে কোথায় লেখা আছে যে এখানে কৌশল্যার জন্ম হয়েছে?' বিজেপির অভিযোগ, ধর্ম-লোকজীবনের মত নানা বিষয়কে সামনে রেখেই ছত্তিশগড়ের বাঘেল সরকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছে। আদিবাসীদেরও কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ায় ছত্তিশগড়ের আদিবাসী দফতরের মন্ত্রী কাওয়াসি লখমা বলেছিলেন, 'তিনি (বাঘেল) সব দেবতার আশীর্বাদপ্রাপ্ত। তিনি ছত্তিশগড়ের এবং আদিবাসীদের উন্নতির স্বার্থে কাজ করছেন। আমি নিশ্চিত যে বাঘেলের পূর্বপুরুষরা আদিবাসী ছিলেন। কারণ, তিনি আদিবাসী মানুষের জন্য কষ্ট অনুভব করেন।'
Read full story in English