''ভোট এলেই পাহাড়ে একটি রাজনৈতিক দল আসে, দিল্লির লাড্ডুতে ভুলবেন না', মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ম্যালের প্রশাসনিক সভা থেকে নাম না করে এভাবেই বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে ফের একবার পাহাড়ে দ্রুত জিটিএ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Advertisment
মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ম্যালে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে পাহাড়ের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একাধিক সময়ে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভের আগুন দেখেছে পাহাড়। অশান্ত পাহাড় থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন পর্যটকরা। দিনের পর দিন পর্যটকশূন্য পাহাড়ে শিকেয় উঠেছিল রোজগার। তবে সেসব এখন অতীত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ''হাসছে দার্জিলিং, সব হোটেল ভর্তি।'' পাহাড়ের বাসিন্দাদের জন্য ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বাড়ি তৈরির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। এরই পাশাপাশি পাহাড়ের পড়ুয়াদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আরও ১০ লক্ষ ক্রেডিট কার্ডের বন্দোবস্ত করার কথাও এদিন জানিয়েছিন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের অন্য অংশের পাশাপাশি পাহাড়েও 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচি নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসাথী-সহ অন্য সরকারি পরিষেবার সুযোগ পেতে পাহাড়বাসীকে সরকারের ওই ক্যাম্পে যেতে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বাকি পুরসভাগুলির পাশাপাশি দার্জিলিং পুরসভাতেও নির্বাচন হয়েছে। এবার পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচনও দ্রুত করানোর আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর।
এপ্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, ''দার্জিলিঙে দ্রুত জিটিএ নির্বাচন হবে। দার্জিলিঙে পঞ্চায়েত ভোটও হবে। এখন দার্জিলিং হাসছে, পর্যটকরা আসছেন। ২০ বছর দার্জিলিঙে পাট্টা দেওয়া হয়নি। এবার সবাইকে জমির পাট্টাও দেওয়া হবে। দার্জিলিঙে হিল ইউনিভার্সটি গড়ে তোলা হচ্ছে।''
Advertisment
পাহাড়ের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপের কথা জানানোর পাশাপাশি এদিন পেট্রোপণ্যের লাগাতার দাম-বৃদ্ধি ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ''উত্তর প্রদেশে নির্বাচন মেটার পর একমাসও হয়নি। নির্বাচনে জিতেই পেট্রোল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে। রোজই পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে। বিজেপি মানুষের কথা ভাবে না।''
নির্বাচনের আগে পাহাড় অশান্ত করার ষড়যন্ত্র কষে একটি রাজনৈতিক দল, এমনই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। নাম না করে এই ইস্যুতে বিজেপিকেই নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন বলেন, ''ভোট এলেই একটি রাজনৈতিক দল আসে। এরা বাংলার মানুষকে ভালোবাসে না। বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লির লাড্ডুর দরকার নেই। দার্জিলিং, কার্শিয়ঙের লাড্ডুতেই খুশি। কিছু রাজনৈতিক দল এসে দার্জিলিঙকে ভুল বুঝিয়ে যায়।''
পাহাড়ের উন্নয়নে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় সব কাজ তৎপরতার সঙ্গে করে যাবে বলে এদিন ফের একবার আশ্বাস মু্খ্যমন্ত্রীর। পাহাড়বাসীর প্রতি তাঁর বার্তা, ''১০ বছর কোনও ঝগড়া নয়, শুধু উন্নয়ন হোক। আগে মানুষ, তারপর রাজনৈতিক দল। পাহাড়ে সবাই এককাট্টা হোন।''
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এদিন আবারও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ আসে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে হাজার-হাজার ভারতীয় পড়ুয়া দেশে ফিরেছেন। তাঁদের নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''ইউক্রেনে যুদ্ধ, ১৭ হাজার পড়ুয়া ফিরেছেন। দেশে কোর্স শেষ করা ব্যবস্থা করা হোক। নিজের রাজ্যেই কোর্স শেষের অনুমতি দেওয়া হোক।''