Advertisment

সেন্ট স্টিফেন্সের ভাষণ বাতিল, বিজেপি বিরোধীদের এককাট্টা করতে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা

২০১৯ লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফেডারেল ফ্রণ্ট গঠন করাই এখন প্রধান চ্য়ালেঞ্জ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কাছে। তিন দিনের সফরে সোমবার দিল্লি যাচ্ছেন বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata-3

সিঙ্গুরের 'অনিচ্ছুক কৃষক'দের পক্ষে আন্দোলনে নামেন তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ মুহূর্তে চিন সফর বাতিল হয়েছে। আগামী অগাষ্টে আমেরিকায় স্বামী বিবেকানন্দর ঐতিহাসিক চিকাগো ভাষণ উপলক্ষ্য়ে আমন্ত্রন পেয়ে তাও বাতিল হয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে সেন্ট স্টিফেন কলেজে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বক্তব্য় রাখার আমন্ত্রন পেয়েছিলেন। ১ অগাষ্ট ওই কলেজের পড়ুয়াদের কাছে দেশের সংখ্য়ালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য় রাখার কথা ছিল। এবার প্রোটোকলের অজুহাতে তা বাতিল করেছে কলেজ কতৃপক্ষ। তবে এই সব অনুষ্ঠান বাতিলের পিছনে গেরুয়া শিবিরের হাত দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, নেত্রীর অনুষ্ঠান বাতিল করার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে গেরুয়া বাহিনীর। এভাবেই হেনস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দিল্লি সফর বাতিল করছেন না তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জোট করতে মরিয়া তিনি। তাই দিল্লিতে বিশপদের একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মমতা। তারপর সংসদের সেন্ট্রাল হলে যাওয়ার কথা রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। সেখানে বিজেপি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন।

Advertisment

দেশে-বিদেশে তৃণমূল সুপ্রিমোর অনুষ্ঠান বাতিল করা হচ্ছে নানা অজুহাতে। দলের নেতারা মনে করছেন, দুবার চিন যেতে দেয়নি। দিল্লির অনুষ্ঠানেও বাধা দেওয়া হল। বিজেপি এভাবে দলের নেত্রীকে আটকাতে পারবে না। বিজেপির বিরোধিতায় সোচ্চার বলেই ঘুরিয়ে এমন খেলা খেলছে। আগামী বছরের শুরুতে ১৯ জানুয়ারী ব্রিগেডে সভা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। জানা গিয়েছে, তিন দিনের দিল্লি সফরে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বিজেপি বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে ব্য়ক্তিগত ভাবে ব্রিগেডে থাকার আমন্ত্রন জানাবেন। তাঁর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে সনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধির। আগামী লোকসভা নির্বাচনে দেশে বিজেপিকে কী ভাবে ঠেকানো যাবে তা নিয়ে তাঁদের মধ্য়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি যে বাংলায় একাই বিজেপিকে বুঝে নিতে পারবেন সেই বার্তাও দেবেন মমতা।

mamata banerjee সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি- শুভম দত্ত

মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বৈঠক করতে পারেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের সঙ্গেও। তাছাড়া সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, আরেজেডি, জেডিএস নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হতে পারে ফেডারেল ফ্রণ্ট নিয়ে। দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেখা করবেন বাংলার মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে। তামাম বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে সাক্ষাত করার মূল উদ্দেশ্য় ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডের জনসভায় তাঁদের হাজির করা। তাহলেই বিজেপির বিরুদ্ধে চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া যাবে। পাশাপাশি আঞ্চলিকদলগুলোর নেতৃত্বের রাশ স্বাভাবিক ভাবে নিজের হাতেই রাখতে তৎপর মমতা।

আরও পড়ুন: রাজ্য়ে প্রবল চিকিৎসক সংকট, কেন্দ্রীয় নীতিকে দায়ী করলেন মুখ্য়মন্ত্রী

রাজনৈতিক মহলের মতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যে ভাবে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোকে একত্রিত করছেন তা দেশের কোনও আঞ্চলিক দলের কোনও নেতৃত্ব করে দেখাতে পারেননি। এমনকী শিবসেনা সম্পাদক উদ্ভব ঠাকরের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁদের তিনি পরিস্কার বলেছেন বিজেপি থেকে সরে আসতে।

তবে বিজেপি বিরোধীরা আঞ্চলিকদলগুলোর যে আঞ্চলিক স্বার্থেই অনেক সময় বিজেপিকে সমর্থন করে সেই ঘটনাও রয়েছে। কিছু দিন আগে তেলেঙ্গনার মুখ্য়মন্ত্রী টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও নবান্নে এসে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। ওই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল বিজেপি ও কংগ্রেস বিরোধী দলগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসা। কিন্তু লোকসভায় তেলেগু দেশমের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে যায় টিআরএস। অনাস্থার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে তা কিন্তু নয়। টিআরএস অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে বিরত ছিল। এর ফলে বিরোধী ভোট তো কমে গেল, একইসঙ্গে সুবিধা হল বিজেপির। অভিজ্ঞ মহলের মতে, আঞ্চলিক দলগুলোর সমস্য়া সামান্য় করণে নিজেদের মধ্য়ে বিভেদ তৈরি করতে কোনও সময় নেয় না। প্রণব মুখোপাধ্য়ায় যখন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন তখন মমতা-মুলায়মের বৈঠক হয়েছিল বিরোধিতা করা হবে বলে। মিটিং-এ বিরোধিতার কথা বলে পরক্ষণেই ডিগবাজি দিয়েছিলেন মুলায়ম সিং। যদিও এবার দেশের আঞ্চলিক দলগুলোকে ঐক্য়বদ্ধ করতে মূল উদ্য়োগী বাংলার নেত্রী। এমনকী মমতা প্রধানমন্ত্রী হলে রাহুলের আপত্তি নেই সেকথা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন কংগ্রেস সভাপতি। কর্নাটকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও মমতা ছুটেছিলেন একটাই উদ্দেশ্য় নিয়ে বিজেপিকে চাপে রাখতে। লালু প্রসাদের ছেলের বিয়েতে ফিরহাদ হাকিমকে পাঠিয়েছেন প্রতিনিধি হিসাবে। স্ট্য়ালিনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

mamata banerjee জম্মু কাশ্মিরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি- শুভম দত্ত

এর আগে জুন মাসের শেষে দিল্লি সফরে সনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। শারদ পাওয়ারসহ সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এমনকী বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতা যশবন্ত সিনহা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ শৌরি, শত্রুঘ্নত সিনহার সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে মোদির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিরোধিতা করার জন্য় যা যা করার দরকার তাই করছেন তৃণমূল নেত্রী। ওই বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও যে রাজনৈতিক স্তরেই কথাবার্তা হয়েছে তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন: এখানে বিরুদ্ধে ভোট দিলে দিল্লিতে সমর্থন নয়, কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি মমতার

দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করেছেন তামাম বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় চেষ্টা করছেন যে রাজ্য়ে যে শক্তিশালী তারাই লড়াই করুক বিজেপির সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের দিকে নজর থাকে সব দলেরই। সেখানে মায়াবতী ও মুলায়মের সঙ্গে জোট বাধারা জন্য় উদ্য়োগ নিচ্ছেন বাংলরা মুখ্য়মন্ত্রী। ২১ জুলাই তিনি হিসেব কষে দিয়েছিলেন কী ভাবে বিজেপির আসন কমবে। রাজ্য়ওয়ারী ওই হিসবে উত্তরপ্রদেশকে সবার আগে রেখেছিলেন। তাঁর হিসাব মূলায়ম ও মায়াবতী জোট হলে ওই রাজ্য়ে বিজেপির ৫০ টি লোকসভা আসন কমে যাবে। জোর ধাক্কা খাবে বিজেপি। তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে কোনও আসনই পাবে না। এবার সব আসন ডিএমকের স্ট্য়ালিন। বিহারে লালু, ওড়িষ্য়ায় নবীন পট্টনায়েক যেখানে যে দল শক্তিশালী সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য় করতে হবে। শুক্রবার নবান্নে এসে দেখা করে গিয়েছেন ন্য়াশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আব্দুল্লা। বিজেপি বিরোধিতা নিয়েই তাঁদের মধ্য়ে বৈঠক হয়েছে। আঞ্চলিকদলগুলো জোটবদ্ধ হলেই বিজেপি কুপোকাত হবে এই চিন্তাভাবনা নিয়েই দৌড়ঝাপ করছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।

tmc bjp PM Narendra Modi Mamata Banerjee sonia gandhi
Advertisment