তৃণমূলের অন্দরে আমফান ত্রাণ বণ্টনে দুর্নীতির উত্তাপ সপ্তমে চড়ল। রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী অরূপ রায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কাজিয়া বেধে গেল। কেন চুনোপুঁটিরা শাস্তি পেল, কেনই বা রাঘব-বোয়ালদের রেহাই দেওয়া হল তাই নিয়েই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস। হাওড়ার তৃণমূল পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "এটা দলের অভ্য়ন্তরীণ বিষয়।"
আরও পড়ুন- ‘সিপিএম আমলে ১০০ শতাংশ চুরি হত, এখন ৯০ শতাংশ কমেছে’
দুর্নীতিতে যুক্তদের রেয়াত করা হবে না বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর আমফান দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতাদের বেশ কিছু জেলায় শাস্তি দিয়েছে তৃণমূল। অনেক জেলায় অবিরত অভযোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে শুক্রবার হাওড়ায় তিন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করেন জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। কিন্তু জেলায় তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এই জেলারই আরেক বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, রাজীবই হাওড়ায় তৃণমূলের ‘কো-অর্ডিনেটর’।
আরও পড়ুন- আমফান ত্রাণ দুর্নীতিতে এবার হাওড়ায় ৩ তৃণমূল নেতা সাসপেন্ড
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সাংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, "দুর্নীতিগ্রস্ত রাঘব বোয়ালদের বাঁচাচ্ছেন হাওড়ার (তৃণমূল) জেলা সভাপতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত পরিশ্রম করছেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছেন। সেখানে দু'এক জন মানুষের জন্য কেন দল কালিমালিপ্ত হবে? কেন মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের দলনেত্রীর বিরুদ্ধে মানুষ কথা বলতে সাহস পাবেন? দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি নেত্রীর সঙ্গে রয়েছি। নেত্রীর ভাবমূর্তি কয়েকজন দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের জন্য খারাপ হবে সেটা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় চাইবে না। যতদিন রাজনীতিতে থাকব এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করব।"
আরও পড়ুন- মুকুল-বাবুলের রিপোর্ট কার্ডে রাজ্য ডাহা ফেল, পাল্টা আক্রমণ তৃণমূলের
রাজ্যের দুই মন্ত্রী হাওড়ার দলীয় দুই পদে রয়েছেন। অরূপ রায় দলের সভাপতি, আর দলের কো-অর্ডিনেটর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কানাঘুষো দীর্ঘদিনের। যে কোনও নির্বাচন এলেই প্রার্থী বাছাই নিয়েই মতপার্থক্য বেড়ে যেত। তবে এবার একেবারে সম্মুখ সমরে দুই মন্ত্রী। রাজীব বলেছেন, "আমার শুধু একটা জায়গায় দুঃখ বা ক্ষোভ, আমি জেলার কো-অর্ডিনেটর। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলার কো-অর্ডিনেটর ও সভাপতি মিলে আলোচনা করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা বার্তা দেবে। আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা নেই, আমাকে অন্ধকারে রেখে কয়েকজন চুনোপুঁটিকে ধরে কাছের লোক হিসাবে কয়েকজন রুই, কাতলা, ইলিশকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা করছে। এটা নিশ্চিতভাবে কাম্য নয়। চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়ালদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলকে বিষয়টি জানিয়েছি।"
আরও পড়ুন- তৃণমূল সদস্যরা লুটেপুটে খাচ্ছে, মানলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বও রীতিমত বেকায়দায়। রাজীবের অভিযোগ নিয়ে অরূপ রায় সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, "আমি যে কাজ করি দলের নির্দেশ ছাড়া করি না। সুব্রত বক্সী আমাদের দলের সভাপতি। তিনি যেভাবে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে আমি কাজ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দল যদি মনে করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে।" রাজীবের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অরূপ রায়। অরূপ রায়ের বক্তব্য, "উনি দলের সাচ্চা কর্মী হলে মিডিয়ার কাছে না বলে দলের কাছে বলতে পারতেন। মিডিয়ায় জানিয়ে দলের মধ্যে এমন বিভ্রান্তি ছড়ালেন কেন?" জেলা সভাপতির তোপ, অনেক প্রেস কনফারেন্সে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু আসেনি। অনেকে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীকে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে হারিয়ে দিয়েছেন।
হাওড়ার এই দুই মন্ত্রীর এমন প্রকাশ্য কাজিয়ায় দুর্নীতিতে তৃণমূলের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন