চলতি বছরই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই দলের নেতাদের বিরাট পরামর্শ কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গের। বৃহস্পতিবার নেতাদের মতভেদ দূরে সরিয়ে রেখে লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছে তিনি। সেই সঙ্গে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত করতে আগামী তিন মাসের জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন খাড়গে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক বিবৃতিতে খাড়গে বলেন, “দিনরাত কাজের মাধ্যমে আমরা লোকসভা নির্বাচনের পরে একটি বিকল্প সরকার দিতে সক্ষম হব,”।
পাশাপাশি দলের নেতাদের খাড়গের পরামর্শ মিডিয়ার কাছে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি না তুলে ধরে স্রেফ জয়ের লক্ষ্যেই কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেছেন, “বিজেপি গত ১০ বছরে তার সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে আবেগপ্রবণ বিষয়গুলিকে সামনে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিটি ইস্যুতে কংগ্রেকে যুক্ত করছে”।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে, খাড়গের অভিযোগ, “আধুনিক ভারত গড়তে কংগ্রেসের অবদানকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করছে মোদী সরকার” “আমাদের এবিষয়ে তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে,”।
আসন বণ্টন নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের মিত্রদের মধ্যে চাপের মুখে, কংগ্রেস নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার রাজ্য ইউনিটগুলিকে বলেছে যে দল আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ২৫৫ টি আসনে ফোকাস করবে। সম্ভবত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় কম সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে দল। দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস তার মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা অবিলম্বে শুরু করতে চলেছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সিনিয়র নেতা রাহুল গান্ধী সহ এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি ভেনুগোপাল দলের পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল জাতীয় জোট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য ইউনিটগুলির সঙ্গেও ব্যাপক আলোচনা চলেছে । কমিটি নেতৃত্বের কাছে তার রিপোর্ট পেশ করেছে।
সূত্রের খবর, খড়গে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক এবং রাজ্যের ইনচার্জ, রাজ্য কংগ্রেস সভাপতিদের সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠকে জানিয়েছেন যে দল ২৫৫ টি আসনে ফোকাস করবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধীও। রাজ্যের নেতারা আসন বন্টন নিয়ে কংগ্রেসের নমনীয়তার একটি ইঙ্গিত হিসাবে দেখছে ইন্ডিয়া জোটের মিত্ররা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, দল ৪২১ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং ৫২ টি আসনে জিতেছিল। বিহারে RJD, মহারাষ্ট্রে NCP, কর্ণাটকে JD(S), ঝাড়খণ্ডে JMM এবং তামিলনাড়ুতে ডিএমকের সঙ্গে জোট বেঁধে আগের নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নামে কংগ্রেস। দল ২০১৯-এর নির্বাচনে বিহারের ৪০ টি আসনের মধ্যে মাত্র নয়টিতে, ঝাড়খণ্ডের ১৪ টি আসনের মধ্যে সাতটি, কর্ণাটকের ২৮টি আসনের মধ্যে ২১টি, মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে ২৫টি এবং তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের মধ্যে নয়টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনের মধ্যে ৭০টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।
২৪-এর নির্বাচনে কংগ্রেস বেশ কিছু কিছু রাজ্যে, বিশেষ করে দিল্লি, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। যদিও আপ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা পাঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চুক্তিতে আগ্রহী। যদিও বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস কংগ্রেসের সঙ্গে কোনোরকম জোটের বিরুদ্ধে। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ইঙ্গিত দিয়েছে যে যে তারা ৬৫ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
"প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মুকুল ওয়াসনিক বলেছেন, “ইতিমধ্যেই বিরোধী ঐক্যের মধ্যে একটি জোট রয়েছে। আমরা বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলব এবং তাদের ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে আলোচনার পথ খোলা রাখা হবে। নির্বাচনের আগে কোন পথে এগিয়ে গেলে জোটের ফায়দা সেই বিষয়টি আলোচনায় রাখা হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, "আমাদের উদ্দেশ্য হল ইন্ডিয়া জোট যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং জোট সরকার যাতে সরকার গঠন করে তা নিশ্চিত করা। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমরা জোটের বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের উদ্দেশ্য হল ভারত জোট যাতে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে তা নিশ্চিত করা।”