Advertisment

মধ্যপ্রদেশ- ছত্তিশগড়ে কেন হারল কংগ্রেস? রাজ্য নেতাদের যুক্তিতে তাজ্জব রাহুল-খাড়গে

কংগ্রেস আছে কংগ্রেসেই।

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
Congress analyses poll losses in MP and Chhattisgarh state leaders come in for criticism , মধ্যপ্রদেশ- ছত্তিশগড়ে কেন হারল কংগ্রেস? রাজ্য নেতাদের যুক্তিতে তাজ্জব রাহুল-খাড়গে

রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে।

গো-বলয়ের দুই রাজ্যেই বাজিমাত করবে হাত শিবির। বেশিরভাগ ভোট পরবর্তী সমীক্ষাতেই এই পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু ফলাফল হল ঠিক উল্টো। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে গেরুয়া ঝড়ে দুরমুশ হয়েছে কংগ্রেস। কেন নিজেদের দখলে থাকা রাজ্যেও পরাজয়ের মুখ দেখতে হল দেশের শতাব্দী পার্চীন দলটিকে। সেসব নিয়েই এই দুই রাজ্যে প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গ ও রাহুল গান্ধী। আপাতভাবে সেই বৈঠকে সৌজন্য বজায় থাকলেও রাজ্য নেতাদের একের পর এক হারের কারণ বিশ্লেষণে কার্যত দিশাহার হাইকমান্ড। সব ভুলে নতুন উদ্যমে এখন লোকসভার জন্য ঝাঁপাতে প্রদেশ নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু, এত দ্রুত দলের রাজ্য নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দল থামানো যাবে? সন্দিহান খাড়গে সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisment

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের প্রচারের নেতৃত্বে ছিলেন পিসিসি সভাপতি কমল নাথ এবং বর্ষীয়ান নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলই (বর্তমানে বিরোধী) এই দায়িত্ব সামলেছেন। সূত্রের খবর, এই দুই রাজ্যের নেতারাই পরাজয়ের কারণ হিসেবে- দলে আত্মতুষ্টি, সমন্বয় ও ঐক্যের অভাব, সাংগঠনিক ব্যর্থতা, বিজেপির প্রচার মোকাবিলায় ব্যর্থতা এবং কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে পৌঁছে না দেওয়ার অক্ষমতাকে চিহ্নিত করেছেন।

ইতিমধ্যেই কমলনাথের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মধ্যপ্রদেশে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ বাড়ছে কমলনাথের উপর। দলীয় সূত্রে খবর, কমলনাথও এই পদে কাজ চালিয়ে যেতে তেমন আগ্রহী নন।

এদিকে এই পরাজয়ের পর ছত্তিশগড় কংগ্রেসের অন্দরে একে অপরকে দোষারোপের পালা মাথাচাড়া দিয়েছে। রাজ্য প্রধান হিসাবে বাঘেলের নেতৃত্বে, কংগ্রেস ২১৮ সালে তার সর্বোচ্চ ৬৮টি আসন পেয়ে নজির গড়েছিল। যা উপনির্বাচনের পরে ৭১টি-তে পৌঁছেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনে দলটি ৩৫টি আসনে নেমে এসেছে, যা ২০০৩ সালে ছত্তিশগড় রাজ্য গঠনের পর সর্বনিম্ন।

বাঘেল, টি এস সিং দেও, প্রাক্তন মন্ত্রী উমেশ প্যাটেল, মোহন মারকাম, পিসিসি প্রধান দীপক বেজ, সত্যনারায়ণ শর্মা, মহম্মদ আকবর, মোহন মারকাম এবং ধনেন্দ্র সাহু সহ ছত্তিশগড়ের মোট ১১ জন নেতা পরাজয়ের পর্যালোচনা বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠকের পরে ছত্তিশগড় কংগ্রেস নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুমারী সৈলজা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের মহিলা প্রার্থীরা ভাল ফলাফল করেছে এবং জোর দিয়েছিল যে লোকসভা নির্বাচনে দল আরও ভাল করবে। তাঁর কথায়, 'আমরা ১৮ জন মহিলাকে টিকিট দিয়েছিলাম, যার মধ্যে ১১ জন জিতেছে। মিডিয়া, এজেন্সি এবং সবাই বলেছিল যে আমরা ছত্তিশগড়ে জিতেছি, এবং কিছুটা হলেও তারা ঠিক ছিল কারণ আমাদের ভোটের শতাংশে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। অনেক কারণ আছে যা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমরা জনগণের আস্থা হারাইনি। লোকসভা নির্বাচনে আমরা আরও বেশি আসনে জিতব।'

রায়পুরে ফিরে, বৃহস্পত সিং, যাকে দল টিকিট প্রত্যাখ্যান করেছিল, পরাজয়ের জন্য সেলজাকে দায়ী করেছিল। সিং বলেছেন, “বাইশটি টিকিট অস্বীকার করা হয়েছিল, যা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছিল। কোনো ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। দলের কাজ ছিল শূন্য। আমাদের রাজ্যের এআইসিসি ইনচার্জ পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন।”

ছত্তিশগড়ের বিদায়ী মন্ত্রী জয় সিং আগরওয়াল হারের জন্য রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন। বলেছেন, 'আমরা বিরোধী দলে থাকাকালীন ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেভাবে লড়াই করেছি, ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এই নির্বাচনে সেভাবে লড়াই করতে পারিনি। গতবার বাঘেলজি আমাদের পিসিসি প্রধান ছিলেন এবং সিং দেওজি ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। এবারের নির্বাচন মন্ত্রীরা তাদের ক্ষমতা দেখাতে পারেননি, প্রার্থী নির্বাচনেও দল কোনও কথা শোনেনি। দলের অভ্যন্তরে তীব্র টানাপোড়েন ছিল।' তাঁর আরও যুক্তি যে, 'আমাদের নেতা (বাঘেল) কৃষকদের উপর ফোকাস করার কারণে কংগ্রেস শহুরে আসনগুলিতে ভোটে খারাপ ফল করেছে। মনে হবে যেন, সমস্ত গ্রামীণ আসনে কংগ্রেস জিতবে, তাই আমাদের শহরে ভোটের প্রয়োজন নেই।'

দিল্লির বৈঠক সম্পর্কে সিং দেও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'এই বৈঠক প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের ফলাফলের গভীরভাবে অধ্যয়নের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কী করা দরকার এবং তথ্য দিয়ে আমাদের লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।'

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি ভেণুগোপাল বলেছেন যে, 'রাজ্য কংগ্রেস প্রধানদের দলের পারফরম্যান্সের উপর বুথভিত্তিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' দলের তরফে ছত্তিশগড়ের পর্যবেক্ষক কুমারী সৈলজা বলেছেন যে তাঁরা ভোটারদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত কিন্তু বিলুপ্ত নয়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একসঙ্গে লড়াই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং জয়ী হবে।

মধ্যপ্রদেশের এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক ইনচার্জ রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, 'আমরা পার্টির পরাজয়ের কারণগুলি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছি এবং নেতারা দলের ত্রুটিগুলি বিশ্লেষণ করেছেন। কংগ্রেস সভাপতি ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শুনেছেন। সংগঠনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সকল নেতা তাঁকে অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা তাঁকে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস আইনসভা দলের একটি সভা করার এবং পরবর্তী সভার জন্য একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার জন্য অনুরোধ করেছি- যাতে এটি নতুন বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন করতে সক্ষম হয়।'

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারা এর আগে দলের ক্ষতির জন্য ইভিএমকে দায়ী করেছিলেন। এই সমস্যাটিও উত্থাপিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সুরজেওয়ালা বলেছেন, 'সমস্ত বিষয় বৈঠকে উত্থাপিত হয়েছিল, তবে জনসমক্ষে সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়।'

CONGRESS rahul gandhi Madhya Pradesh Kamal Nath Mallikarjun Kharge Bhupesh Baghel Chattishgarh Chattishgarh Congress Madhya Pradesh Assembly Election 2023
Advertisment