ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার না করায় ‘বিজেপিকে’ এবার একহাত নিল কংগ্রেস। হরিয়ানা রাজ্যের ভিওয়ানি জেলার ছোট শহর তোশাম সেখানেও গিয়ে পৌঁছেছে প্রতিবাদের আঁচ। কিরণ চৌধুরী, তোশামের কংগ্রেস বিধায়ক, দিল্লিতে কুস্তিগীর এবং তাদের সমর্থকদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ঘটনার জন্য বিজেপিকে নিশানা করেছেন। কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, দেশকে গর্বিত করেছে যারা সেই মেয়েরা আজ ন্যায় বিচারের আশায় দিল্লির রাজপথে পুলিশের হাতে মার খাচ্ছে। এমন ঘটনায় গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মেয়েরা বিচারের আশা ছেড়ে দেবে।
দিল্লিতে পুলিশ এবং কুস্তিগীর এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দেশজুড়ে প্রতিদাব আরও ব্যাপক আকার নিয়েছে। অন্যদিকে এ নিয়ে বেড়েই চলেছে রাজনৈতিক তরজা। হরিয়ানার ভিওয়ানির ধনানা গ্রামে, যেখানে প্রায় এক মাস ধরে কুস্তিগীর কন্যাদের সমর্থনে প্রতিবাদ চলছে। কংগ্রেস বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণ চৌধুরী এখানে পৌঁছে প্রতিবাদে তাঁর সমর্থন জানান। পাশাপাশি দিল্লির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের এমন করুণ পরিস্থিতি আমি এই প্রথম দেখছি। স্বাধীনতার পর সবার কথা বলার অধিকার আছে। তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ সেই সব মেয়েদের কথা শোনা যারা দেশকে পদক এনে দিয়েছেন। পাশাপাশি কিরণ চৌধুরী বলেন, একদিকে বিজেপি বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও স্লোগান দেয়, অন্যদিকে মহিলা কুস্তিগীরদের প্রকাশ্যে হয়রানি করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এফআইআর দায়ের হয়েছে, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যে মেয়েরা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে, দেশ কে গর্বিত করেছে, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ দুঃখজনক।
অন্যদিকে সাংসদ ব্রিজ ভূষণকে গ্রেফতার না করার পিছনে রাজনৈতিক কারণ জানিয়েছেন কিরণ চৌধুরী। কিরণ বলেন, দেশকে গর্বিত করা মেয়েদের কথা না শুনলে গ্রামের সাধারণ মেয়েরা বিচারের আশা ছেড়ে দেবে। অন্যদিকে, বিরোধীদের রাজনীতি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে কিরণ বলেন, বিরোধীদের কাজই হলো মানুষের আওয়াজ তোলা। এছাড়াও বিজেপির বিরুদ্ধে জাতপাতের রাজনীতি করার অভিযোগ সামনে এনেছেন তিনি।
এদিকে কুস্তিগীরদের প্রতিবাদে দলের সমর্থনের কথা আগেই জানিয়েছে কংগ্রেস। সামনেই রাজস্থান বিধান সভা নির্বাচন। এরপরই ২৪-এর লোকসভা ভোট। আসন্ন নির্বাচনে কুস্তিগীরদের প্রতিবাদে তাদের পাশে থেকে বিজেপিকে বিরাট ধাক্কা দিতে চাইছে কংগ্রেস। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হরিয়ানার দলীয় কোন্দল শেষ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। এপ্রশ্নে তিনি কর্ণাটক ও রাজস্থানের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দলীয় হাইকমাণ্ড সফল ভাবে কর্ণাটকে দলের বিবাদ মিটিয়েছে। রাজস্থান এবং হরিয়ানাতেও এর অন্যথা কিছু হবে না’।
এদিকে ভূপিন্দর সিং হুডা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফোনে বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করা হয়েছে তাদের ন্যায়বিচার দেওয়া হবে। তারাই আমাদের সমগ্র দেশবাসীর জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। কিন্তু, হরিয়ানা সরকারের ভূমিকায় আমি সম্পূর্ণ বিস্মিত। কী করছে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব? এই সমস্ত খেলোয়াড় যারা বিচার চেয়ে রাস্তায় বসে আছে তারা আমাদের হরিয়ানার। অন্তত, রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের উচিত ছিল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা এবং তাদের (খেলোয়াড়দের) কথাশোনা এবং তারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। বিপরীতে, আমরা, পুরো সিএলপি, যন্তর মন্তরে গিয়ে আমাদের দেশের অগ্নিকন্যাদের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি।”
অন্তর্দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে এবং আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করতে, বিরোধী দলের নেতা ভূপিন্দর সিং হুডা বুধবার চণ্ডীগড়ে কংগ্রেস এজ জরুরি সভার আহ্বান করেছেন। এই বৈঠকে রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এবং কিরণ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু সুরজেওয়ালা বিদেশে রয়েছেন যদিও চৌধুরীর বৈঠকে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ ঝাঁঝ বাড়তেই হরিয়ানা কংগ্রেস বিজেপি এবং জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) জোট সরকারের বিরুদ্ধে একটা অস্ত্র হাতে পেয়েছে। কিন্তু দলীয় কোন্দল কংগ্রেসের পক্ষে এক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছে দলীয় হাইকমাণ্ড এই বিরোধের শীঘ্রই এক সমাধান সূত্র বের করবে।