দীর্ঘ সাত ঘন্টার বৈঠক। পরতে পরতে নাটক। ভুল বোঝাবুঝি। মান অভিমান শেষে যেটা প্রত্যাশিত ছিল সেটাই হয়েছে। আরও ছয় মাসের জন্য কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকলেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু সমস্যার কি সমাধান হল? যেসব প্রশ্ন সোনিয়াকে চিঠি দিয়ে দলের ২৩ নেতা তুলেছিলেন সেগুলোর নিরসন কীভাবে হবে? তার উত্তর স্পষ্ট হয়নি। এদিকে ম্যারাথন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষ সোমবার সন্ধ্যায় 'বিক্ষুব্ধ' নয়'জন নেতা গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে বৈঠক সারেন। ফলে জল্পনা অব্যাহত।
আজাদের বাড়িতে কেন বৈঠক? কংগ্রেস নেতা ও দলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা সোনিয়া দেওয়া চিঠিতে সাক্ষরকারী আনন্দ শর্মা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'ওয়ার্কিম কমিটির বৈঠকে কী হল- দলের সভানেত্রীকে দেওয়া চিঠিতে যাঁরা সাক্ষর করেছেন তাঁদের তা স্পষ্ট করতেই এই বৈঠক। বৈঠকের নির্যাস শুনে সবাই সন্তুষ্ট।'
আনন্দ শর্মার কথায়, 'ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে খোলা মনে আলোচনা হয়েছে। অনেক ভুলবোঝাবুঝি ও ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফলে আমাদের বিরুদ্ধে অপ্রোয়জনীয় কথা বলা হয়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত বলে আমি দাবি করেছি।' এরপরই শর্মা বলেছেন, 'আজাদ, ওয়াসনিক ও আমি নিজের কথা বলতে পেরেছি। সনিয়া গান্ধীও পুরো বিষয়টিকে অত্যন্ত পরিচালনা করে আগামীতে ঐক্যভাবে লড়াই ও দল পরিচালনার কথা জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি হতাশ বলে জানালেও আমাদের মূল্যবান দলীয় কর্মী বলে মেনে নিয়েছেন। মনোমালিন্য দুর করার চেষ্টা করেছেন। আমরাও কখনও তাঁকে অসম্মান করিনি। শেষ পর্যন্ত সবই মিটে গিয়েছে।' কিন্তু সত্যি কী মিটেছে? চিঠিতে সাক্ষরকারী এক নেতার কথায়, 'এখন অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে যে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে দল কোন পথে চলে, নেতৃত্ব ও সংগঠনের কী হয়।'
সোনিয়া গান্ধীকে দেওয়া ২৩ নেতার চিঠিতে উল্লেখ ছিল যে, চিঠিতে সাক্ষরকারীরা সোনি-রাহুল গান্ধীর বিপক্ষে নয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদনে তা প্রকাশিত হয়।
সোনিয়া যখন হাসপাতালে ছিল, তখন এই চিঠি লেখা হল কেন। যারা চিঠি লিখেছে তারা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, ওয়ার্কিং কমিটির সভায় রাহুল গান্ধী এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ঝড় ওঠে। কপিল সিবাল থেকে গুলাম নবী আজাদ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা আজাদ জানিয়েছেন যে, সভানেত্রীর শারীরিকভাবে সুস্থ তা জানার পরই তাঁর হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার ছয় দিন পর ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আজাদ-আনন্দ শর্মী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলেছেন তাঁরা নেহেরু-গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। উল্টে তাঁরা বলেছেন যে, কংগ্রেসের যৌথ নেতৃত্বের প্রশ্নে নেহেরু-গান্ধী পরিবার 'অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ'।
সোনিয়া গান্ধীকে দেওযা চিঠিতে তিন স্তবক বিজেপি-আরএস,এস-এর বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। নেহেরু-গান্ধী পরিবারের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। যা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন আজাদ। সভায় পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি জানতে চান যে, 'কোনও কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি অপরাধ?'
গুলাম নবী আজাদের যুক্তি, ওয়ার্কিং কমিটির বাইরে থেকে কেই বিজেপি যোগ নিয়ে কথা বলেছে ও তা নিয়ে সভায় মাতামাতি চলছে। যার প্রতিবাদ করেছেন আজাদ, ওয়াসনিক, শর্মারা। আজাদ সভায় বলেছিলেন, 'অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি তখনই পদত্যাগ করবেন।'
সভায় আনন্দ শর্মা জানান, ''জীবনভর কংগ্রেস দলই করেছি। ইন্দিরা গান্ধীর পাশে যখন কেই নেই তখন আজাদ ছিলেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের লাঠির ঘা সহ্য করেছেন। আমাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাঁদের অনেকেই কংগ্রেস থেকে চলে গিয়েছিলেন। পরে আবার ফিরেছেন। রাজনৈতিক পর্যটকদের সঙ্গে যেন আমাদের তুলনা করা না হয়।'
অম্বিকা সোনি ২৩ নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সুপারিশ করলে ওয়াসনিক জানতে চান 'চিঠি লেখা, প্রশ্ন তোলা কী অপরাধ?'
গুলাম নবী আজাদ বলেছেন, 'আমাদের লড়াই সোনিয়া-রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নয়। আমরা কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছি, যা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। দলের অভ্যন্তরে কোনও লড়াই নেই। অনেক সময়ই নানা বিষয়ে আলোচনা হয় আবার কখনও চিঠি চালাচালিও হয়ে থাকে।'
কিন্তু, হাত শিবিরের অন্দরের বিরোধ সত্যিই কি মিলট? তা নিয়ে জল্পনা থাকছেই।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন