মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এবার যুব কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিবিআইকে নিশানা করে এবার ‘সত্যাগ্রহ’-এর পথে যাচ্ছে রাজ্য যুব কংগ্রেস। কলকাতার নগরপালের বাংলোতে সিবিআই হানার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে ধর্নার পর এবার দিল্লি পাড়ি দিচ্ছেন মমতা। আগামী ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় স্তরের বিরোধী নেতৃত্বদের নিয়ে ধর্নায় বসার কথা বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর ঠিক সেই সময়ই তৃণমূল নেত্রীর অস্বস্তি বাড়িয়ে এ শহরে ‘সত্যাগ্রহে’র পথে যুব কংগ্রেস।
পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রোহন মিত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘‘সাড়ে চার বছর ধরে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। কিছুই হয়নি। তদন্ত নিয়ে কী করছে সিবিআই? নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা উচিত সিবিআইয়ের। অথচ একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে তারা। মুকুল রায় যেই বিজেপিতে যোগ দিলেন, অঘোষিত ক্লিনচিট দিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। হিমন্ত বিশ্বশর্মাকেও ছেড়ে দেওয়া হল। আমরা চাই, অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হোক।’’ রোহনবাবু আরও বলেন, ‘‘আমানতকারীরা আজও টাকা ফেরত পাননি। ওঁদের টাকা ফেরানো হয়নি।’’
আরও পড়ুন- মমতাকে ফোনে রাহুল গান্ধী কী বলেছেন? প্রশ্ন ‘ছোড়দা’র
সিবিআই তদন্তের দাবীতে কলকাতা যুব কংগ্রেসের নিজাম প্যালেস ঘেরাও, উপস্থিত ছিলেন আব্দুল মান্নানও#AbdulMannan #IndianNationalCongress #KolkataYouthCongress #INC #Kolkata #CBI #NijamPalace #WestBengalCongress pic.twitter.com/tV8yXTVRIa
— IE Bangla (@ieBangla) February 7, 2019
চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকার প্রতিবাদে ধর্নায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুব কংগ্রেস। এ প্রসঙ্গে মমতাকে বিঁধে রোহনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কবে দিল্লিতে ধর্নায় বসছেন, কী করেন উনি, তা দেখেই সিদ্ধান্ত নেব। উনি তো রাজীব কুমারকে বাঁচাতে যাচ্ছেন দিল্লি। আমাদের অ্যাজেন্ডা হল আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া ও অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া।’’ কবে ‘সত্যাগ্রহ’-এ বসছেন? জবাবে রোহনবাবু বলেন, ‘‘১০ তারিখই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা, তাই আমরা এমন কোথাও সত্যাগ্রহ করব, যাতে কারও কোনও অসুবিধা হবে না।’’ সম্ভবত দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নার সময়ই সত্যাগ্রহ করতে পারে যুব কংগ্রেস নেতৃত্ব, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন, ফের ধর্না মেট্রো চ্যানেলে, মমতার বিরুদ্ধে ময়দানে অশোক ভট্টাচার্য
চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের ভূমিকার প্রতিবাদে এদিন নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে তৃণমূল-বিজেপি আঁতাত নিয়ে সরব হন মান্নান। এদিন বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা বলেন, ‘‘সিনেমায় দেখা যায়, একজন ভিলেনকে ছুরি মারছেন, অথচ অন্য জন মরে গেলেন। লোকে ভাবল, লোকটা মরে গেল। কিন্তু তা নয়, নকল ছুরি দিয়ে মারা হয়েছে। এখানেও সেই নকল গেম করা হচ্ছে। বিজেপি ওঁকে বলার সুযোগ দিয়ে দিল। আর উনিও ভাবলেন বিজেপির বিরুদ্ধে উনি সরব হলেন। রাহুল গান্ধী আসলে বিজেপি বিরোধী মুখ। তাঁকে আটকাতে হবে তাই এমনটা করলেন।’’ মমতাকে বিঁধে মান্নান আরও বলেন, ‘‘পাঁচরাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের জয়ের পর একবারও উনি রাহুলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন?’’
উল্লেখ্য, বুধবার চিটফান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের নিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। তাঁর গলাতেও এই ইস্যুতে তৃণমূল বিরোধিতার সুর স্পষ্ট। এর আগে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরিও মমতার সমালোচনা করেছেন। সব মিলিয়ে রাজীবকাণ্ড ও তৎপরবর্তী ধর্নায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাহুল গান্ধী সমর্থন জানালেও, রাজ্য কংগ্রেস যে ভিন্ন মেরুতে তা ফের স্পষ্ট হল এদিনও।