কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগরপাড়ার বাড়িতে মঙ্গলবার হাজির হলেন 'আক্রান্ত আমরা' মঞ্চের সদস্যরা। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। এরপর ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল যান খড়দহ থানায়। সংগঠনের পক্ষে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, "আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে তাঁরা এখনও আতঙ্কিত। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে কথা বলতে পারবেন না, তা হয় নাকি! আমরা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে বলেছি, এই পরিবারের আতঙ্ক কাটাতে যাতে সাহায্য করা হয়। কারণ, সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের সময় থেকেই থানা সবরকম অসহযোগিতা করেছে।"
তবে পুলিশকে জানিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না "আক্রান্ত আমরা"। এরপর এই সংগঠনের সদস্যরা সমস্ত বিষয়টি জানাবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে। অম্বিকেশবাবু বলেন, "রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টা জানানো হবে। জানানো হবে রাজ্যপালকে। সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্থ হলে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে তাঁকে নিয়েই রাজ্যপালের কাছে যাব।"
এদিকে এখনও পুরুলিয়াতেই রয়েছেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। তাঁর দাদা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সামাজিক মাধ্যমে লেখা বা ভিডিও পোস্ট বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এখনও ভাই অসুস্থ রয়েছে। তবে সুস্থ হলে ফের কাজ শুরু করবে। এখনও ছোটখাট পোস্ট হচ্ছে।"
উল্লেখ্য, সোমবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে সন্ময়বাবুর দাদা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভাইকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।" বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আগরপাড়ায় একটি বাড়ি থেকে সন্ময়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। খড়দহ থানার পুলিশ তাঁর ওপরে অকথ্য অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবার। পরে পুরুলিয়া আদালতে জামিন পাওয়ার পর সন্ময় প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন।
জামিন পেয়েই তোপ দেগেছিলেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের দাবি, নানা দিক থেকে এ মুহূর্তে বিপর্যস্ত তিনি। এদিন তাঁর দাদা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভাইয়ের ব্লাড প্রেসারের সমস্যা, সুগারের সমস্যা, সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত। ওষুধ খাইয়ে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম দরকার। ওঁকে এখন লোকজনের মধ্যে রাখা যাবে না। ওঁর স্বাস্থ্যটা তো আগে! প্রকাশ্যে আসার পর ওর যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে কে সামলাবে বলুন?" এদিকে মঙ্গলবার সন্ময়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীরা মহানগরের পথে নামছে। তপনবাবু বলেন, "আমি সেখানে যাব।"
আরও পড়ুন: ছেলের বিয়ে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য নোবেল জয়ী অভিজিতের মায়ের
পুরুলিয়ায় জামিন পেয়েই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চলেছে। থার্ড ডিগ্রি কী, এখানে এসে বুঝতে পারলাম। আমাকে জল পর্যন্ত খেতে দেয়নি। খালি গায়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে, মারধর করেছে। পিসি ভাইপোর নামে আমি যদি ভুল কিছু লিখে থাকি, সে জন্য মানহানির মামলা হতে পারত। কিন্তু পুলিশ দিয়ে এই অত্যাচার কেন?” তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সন্ময় একদম ভাল নেই। ওঁর হাতে ফোনও দেওয়া হচ্ছে না।"
আরও পড়ুন: ‘নোবেলজয়ী অভিষেকবাবু’, মমতার মন্তব্যে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল সাইটে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের অভিযোগ, কোনও পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে সন্ময়কে। গ্রেফতারের সময় পুলিশের সঙ্গে শাসকদলের কর্মীরাও ছিল বলে দাবি পরিবারের। ঘটনার পরের দিনই সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল। বিজেপি জানিয়ে দেয়, এই ইস্যুতে তাঁরা সন্ময়ের পরিবারের পাশে রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এ রাজ্যে বাক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে গোপন আতাঁত আছে। কংগ্রেস নেতার বাড়িতে বিজেপি নেতার হাজিরাই এর প্রমাণ।