সংসদে নিজের মেজাজেই রাহুল গান্ধী। লোকসভায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ঘিরে টানটান উত্তেজনা। মাঝে মধ্যেই শাসক-বিরোধী সাংসদদের শোরগোলে উত্তাজনা ছড়াচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
মঙ্গলবার লোকসভায় অনাস্থা-বিতর্ক নিয়ে আলোচনায় রাহুল গান্ধী ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডুয়েল দেখার অপেক্ষায় ছিল দেশ। কিন্তু, অনাস্থা-আলোচনায় প্রথমে রাহুল নন, বক্তৃতা শুরু করেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। আর এই নিয়েই শুরু হয় চরম চর্চা। শুরু থেকেই মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেন গগৈ। এদিকে এই আলোচনার আগে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরোধীদের ‘পাল্টা চ্যালেঞ্জ’ ছুড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাহুল কেন লোকসভায় ভাষণ দেননি তা নিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও রয়েছে বিভ্রান্তি। যদিও দলের কেউ কেউ মনে করছেন যে তিনি "সম্ভবত অনুভব করেছেন যে গৌরব গগৈকে দিয়েই উত্তর-পূর্বের বিতর্ক শুরু করা উচিত"। দলের একাংশ অবশ্য মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী হাউসে উপস্থিত ছিলেন না বলেই রাহুলও নীরব ছিলেন।
বিতর্কের শুরুতেই কংগ্রেস সাংসদ গগৈ বলেন, ‘মণিপুর জ্বলছে মানে গোটা ভারত জ্বলছে। বিচার চাইছে মণিপুর। মণিপুরে ডবল ইঞ্জিন সরকার ব্যর্থ। মোদীজি নীরব, তার কারণ মুখ খুললে তাঁর ডবল ইঞ্জিন সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। ভুল স্বীকার করতে চাইছেন না বলেই তিনি মৌন।’ নিজের বক্তব্যে চাঁচাছোলা ভাষায় গৌরব গগৈ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। বলেন, ‘মণিপুরে গিয়েছেন রাহুল গান্ধী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ অন্যরাও। কেন যাননি প্রধানমন্ত্রী? মণিপুর নিয়ে ৩০ সেকেন্ডের জন্য মুখ খুলতে কেন ৮০ দিন সময় নিলেন প্রধানমন্ত্রী? মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহকে কেন এখনও সরানো হল না? উনি (প্রধানমন্ত্রী) তো অতীতে গুজরাত, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীদের সরিয়েছেন।’
বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র দাবি মণিপুর নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিন প্রধানমন্ত্রী মোদী। অনাস্থা-আলোচনায় গৌরব বলেন, ‘বিরোধী জোটের অবস্থান স্পষ্ট। তারা চায় সংসদে মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দিন প্রধানমন্ত্রী। এজন্যই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছি আমরা। মণিপুরের বিচার চাই।’ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্ক চলাকালীন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেছেন, ‘আপনারা (বিজেপি) ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের কথা বলতে পারেন, আমরা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির কথা বলব।’
গৌরব গগৈ’য়ের বলার পর লোকসভায় অনাস্থা-আলোচনায় শাসক দল বিজেপির তরফে বলেন নিশিকান্ত দুবে। শুরু থেকেই তাঁর নিশানায় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। নিশিকান্ত দুবে বলেন, ‘আমি ধৈর্য নিয়ে সবটা শুনলাম। আমার কথা শুনুন এবার। এরপর আর রাহুল গান্ধী একটা কথাও বলতে পারবেন না। মণিপুর নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। আমি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি। ইন্ডিয়া’র যত জন সাংসদ রয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন, তাঁদের মধ্যে মাত্র কয়েক জনই এর পুরো নাম বলতে পারবেন। এটা কোনও অনাস্থা ভোট নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা আসলে বিরোধীদের আস্থা পরীক্ষার ভোট। বিরোধীরা আসলে দেখতে চান, কে কে তাঁদের সমর্থন করছেন। বিরোধীরা নিজেদের মধ্যেই লড়াই করছেন।’লোকসভায় অনাস্থা বিতর্কের আগে এদিন বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। পদ্ম শিবির সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শেষ বলে ছক্কা মারব।’এদিকে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, রাহুল গান্ধীর ‘গুগলি’তেই বিজেপি দিশেহারা। খেলা তো এখনও বাকী!