মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাহুল গান্ধীর চিঠি ও দুই শীর্ষস্থানীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতার তৃণমূলের ব্রিগেডে হাজিরা নিয়ে বিপাকে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস। দলের রাজ্য নেতৃত্ব যতই 'এমন কিছু হয়নি' ভাব করুন না কেন, এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট না হলেও এই দুই ঘটনার ফলে দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে মনে করছে দলের একাংশ।
ব্রিগেডে তৃণমূল কংগ্রেসের জনসভায় হাজির থাকছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের দুজন প্রতিনিধি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দলের লোকসভার নেতা মপান্না মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। একইসঙ্গে শুক্রবার বিজেপি বিরোধী এই সভাকে সমর্থন জানিয়ে 'মমতাদি' কে চিঠি দিয়েছেন রাহুল। এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য কংগ্রেসের "মুখ পুড়েছে" বলে মনে করছেন দলেরই একাংশ। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র মনে করেন, "এআইসিসি সামগ্রিকভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছে। তবে এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে।"
সাংসদ ও দলের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরীর হুঁশিয়ারি, "এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না তৃণমূলকে।" শুধু তাই নয়, ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রদেশ কংগ্রেস সদর দপ্তরে বৈঠকে এক ছাত্রনেতা স্পষ্ট বলেছেন, রাজ্যে কংগ্রেসের যখনই ভাল সময় আসে তখনই দিল্লির নেতৃত্ব এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেন যার ফলে এখানে সংগঠনের ক্ষতি হয়। এর প্রতিবাদে মূলত সরব হয়েছেন দলের যুব ও ছাত্র নেতারা। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ষীয়ান নেতারা অনেকে তাঁদের সঙ্গে সহমত।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করেছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। পরবর্তীতে সেই সুখের সংসার শুধু ভাঙেনি, রীতিমত কংগ্রেসের ঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে তৃণমূল। হিসাব অনুযায়ী এই মুহূর্তে বিধানসভায় বিরোধী দলের তকমাও থাকার কথা নয় কংগ্রেসের। মুর্শিদাবাদ ও মালদার মত কংগ্রেসের ঘাঁটি ঝুলঝাড়া করেছে শাসকদল। সোমেন মিত্র ও অধীর চোধুরী নিয়মিত অভিযোগ করছেন, কংগ্রেস কর্মীদের খুন, মারধরে জড়িত তৃণমূল। সেই কংগ্রেসের ওজনদার দুই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ব্রিগেডে আসায় যারপরনাই বিড়ম্বনায় পড়েছে দল।
এদিন রাজ্য কংগ্রেসের সদর দপ্তরে সোমেন মিত্র, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল সংকটের ছাপ। কেন রাহুল মমতাকে সমর্থন করে চিঠি দিয়েছেন বা দলের দুই শীর্ষ নেতা হাজির থাকবেন, তার যুৎসই জবাব কোনও নেতাই দিতে পারেন নি। তাঁরা এও স্বীকার করতে চান না এর ফলে দলের কর্মী ও সমর্থকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। কিন্তু গতকালের ছাত্র সংগঠনের বৈঠক ও এদিন রাজ্য দপ্তরে নেতৃত্বের ফিসফিসানিতে স্পষ্টতই অস্বস্তিতে রাজ্য কংগ্রেস।
তাহলে যে দুই নেতা ব্রিগেডে যাবেন তাঁরা কি প্রদেশ দপ্তরেও যাবেন না? সোমেনবাবু বলেন, "মল্লিকার্জুন খাড়গে ব্রিগেডের আগে রাজ্য দপ্তরে আসবেন বলে মেইল করেছেন। কিন্তু অভিষেক মনু সিংভির কর্মসূচি জানা নেই।"