রাজীব কুমার ইস্যুতে ধর্না মঞ্চে থাকাকালীন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সেই ফোনালাপের কথা মঞ্চে ঘোষণাও করেন মমতা। এমনকি টুইট করে তৃণমূল নেত্রীর পাশে থাকার বার্তাও দেন রাহুল। কিন্তু সর্বভারতীয় সভাপতি এমন অবস্থান নিলেও বুধবার চিটফান্ডের দোষীদের গ্রেফতারি ও শাস্তির দাবিতে কলকাতায় পথে নামল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। এমনকি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "অন্যায়ভাবে রাজীব কুমারকে আড়াল করছেন তৃণমূল নেত্রী।"
আরও পড়ুন: কেলেঙ্কারি! মমতার ধর্না মঞ্চের সামনে রাস্তা অবরোধে চিটফান্ড ক্ষতিগ্রস্তরা
সোমেন মিত্র এদিন আরও বলেন, "পুলিশ কমিশনারকে সিবিআইয়ের সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে আদপে আড়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে রাজধর্ম পালন করলেন না তিনি। চিটফান্ড তদন্তের জন্য রাজ্য সরকারের গঠিত সিট এর প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার। তাই তিনি দায় এড়াতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করি না। আমাদের দাবি প্রকৃত আপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হোক।" একই সঙ্গে তিনি জানান, চিটফান্ড কাণ্ডে প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে প্রদেশ কংগ্রেসের আন্দোলন জারি থাকবে। চিটফান্ডে আমানতকারিদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও উঠেছে এদিনের মিছিল থেকে। আর স্বয়ং রাহুল গান্ধী এই আন্দোলনের বিষয়ে রাজ্য কংগ্রেসকে পূর্ণ সমর্থন করছেন বলেও জানালেন সোমেনবাবু।
রাহুল যখন টুইট এবং ফোন করে মমতার পাশে থাকার স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন, তখন একই দলের রাজ্য শাখার সভাপতি সোমেন কীভাবে ভিন্ন কথা বলছেন? রাজীব কুমার-সিবিআই ইস্যুতে মেট্রো চ্যানেলে তৃণমূল নেত্রীর ধর্না জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। বিজেপি বিরোধী প্রায় সব দলের নেতৃত্বই ফোন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফোন করেছেন রাহুলগান্ধীও। তাহলে কী করে এমন কথা বলছেন সোমেনবাবুরা? রাজ্য কংগ্রেস সভাপতির যুক্তি, "কেন্দ্র স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে ধংস করতে চাইছে। মোদী সরকারের এই অগনতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যাঁরা পথে নামবে তাঁদের নৈতিক সমর্থন দেবে কংগ্রেস। এটা কংগ্রেসের ঘোষিত নীতি। তবে পুলিশ কমিশনারকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা সমর্থন যোগ্য নয়।" রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ ইস্যুতে মমতাকে রাহুল গান্ধী সমর্থন করেছেন বলে যা প্রচার হচ্ছে তা একেবারেই সঠিক নয়, মত সোমেন মিত্রর। ফোনে ওই ধরনের কথা বলার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন তিনি। তাহলে কি অসত্য বলা হচ্ছে? সরাসরি এ প্রশ্নের কোনও উত্তরও নেই কারও মুখে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সর্বভারতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতা থেকেই বিজেপি বিরোধিতা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নাক্ সমর্থন করতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছে কংগ্রেস। ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডের সভাতে দুজন প্রতিনিধিকে পাঠানোর কংগ্রেসি সিদ্ধান্তের কারণও একই। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেসের পক্ষে প্রতিদিন দল ভাঙিয়ে নেওয়া তৃণমূলকে সমর্থন করা অসম্ভব। তাই এই অবস্থানগত পার্থক্য।