হিন্দি বলয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ দখলই পাখির চোখ। তাই বিধানসভা ভোটের দু'বছর বাকি থাকতেই প্রস্তুতি শুরু করে দিল কংগ্রেস। সময় নষ্ট না করে আগেভাগেই উত্তরপ্রদেশ ভোটকে মাথায় রেখে দলের সাতটি কমিটি গঠন করলেন সোনিয়া গান্ধী। উল্লেখযোগ্যভাবে দলের পূর্ণ সময়ের সভাপতি ও সংগঠনের আমূল সংস্কারের দাবিতে সভানেত্রীকে চিঠি দেওয়া ২৩ নেতার কাউকেই এইসব কমিটিতে রাখা হয়নি। একদিকে, এত আগে প্রস্তুতি শুরু করে সংগঠনকে চাগিয়ে তোলা, অন্যদিকে বিক্ষুব্ধদের বার্তা দিতেই হাইকম্যান্ডের এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তেহার তৈরির কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সেই রাজ্যে নেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতিন প্রসাদ, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর এবং ঝাড়খণ্ডে দলের দায়িত্বে থাকা আর পি এন সিং-কে। এঁরা প্রত্যেকেই সোনিয়াকে চিঠি দেওয়া নেতাদের অন্যতম। উল্লেখ্য, দলের ইস্তেহার তৈরির জন্য যে ছয় সদস্যের যে কমিটি তৈরি করা হয়েছে সেই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ। তিনি দলের 'বিক্ষুব্ধ' ২৩ নেতার সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন।
গত তিন দশক ধরেই রাজনৈতিকভাবে দেশের অন্যতম গুরুত্ববাহী উত্তরপ্রদেশে ভাল করতে ব্যর্থ কংগ্রেস। ২০১৭ সালে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট হলেও মাত্র সাতটি আসন দখল করতে পেরেছিল শতাব্দীপ্রাচীন দলটি। ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব আনা হয় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে। কিন্তু তাতেই ফলাফলের বদল হয়নি। উল্টে পদ্ম ঝড়ে নেহুরু-গান্ধীদের দুর্গ বলে পরিচিত আমেঠি রাহুল গান্ধীর হাতছাড়া হয়।
অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই তাই ২০২২ বিধানসভায় উত্তরপ্রদেশে হাত শিবিরের অবস্থান পোক্ত করতে মরিয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। তাই যথেষ্ট সময় থাকতেই কোমড় বেঁধে ঘর গুছোতে প্রস্তুতি শুরু করল কংগ্রেস। ইস্তেহার তৈরির জন্য দলের প্রথম বৈঠ গত জানুয়ারিতে কানপুরে হয়েছিল বলে সূত্রের খবর।
ইস্তেহার গঠন কমিটি ছাড়াও রয়েছে সংগঠনের বিস্তার কমিটি, সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, কর্মসূচি বাস্তবায়ণ, প্রশিক্ষণ ও ক্যাডার, পঞ্চায়েত, এবং প্রচার ও জনসংযোগ সংক্রান্ত কমিটি।
সলমন খুরশিদ ছাড়াও যাঁরা নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন তাঁরা হলেন নির্মল খাতরি, নসিব পাঠান, পিএল পুনিয়া, আরাধনা মিশ্র, সুপ্রিয়া শ্রিনাতে, বিবেক বনশল, অমিতাভ দুবে, প্রমোদ তিওয়ারি, প্রদীপ জৈন, গজরাজ সিং, নসিমউদ্দিন সিদ্দিকি, ইমরান মাসুদ ও বাল কুমার পটেল। সলমন খুরশিদ ছাড়াও ইস্তেহার গঠন কমিটিতে রয়েছেন পি এল পুনিয়া, আরাধনা মিশ্র মোনা, বিবেক বনসল, সুপ্রিয়া শ্রীনাথ ও অমিতাভ দুবে। কংগ্রেসের বিস্তার কমিটির প্রধান প্রমোদ তিওয়ারি। সদস্য কমিটির প্রধান করা হয়েছে অনুরাগ নারায়ণ সিং-কে। মিডিয়া কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছে রশিদ আলভিকে। এটা আসভির রাজনৈতিক জীবনের প্রত্যাবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, দলের পূর্ণ সময়ের সভাপতি ও সংগঠনের আমূল সংস্কার চাওয়াতে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বেশ কয়েকজন নেতাকে হেনস্থা হতে হয়েছিল দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে। এবার একেবারে সরাসরি সোনিয়াকে নিশানা করে চিঠি লিখলেন উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের ৯ নেতা। সোনিয়া গান্ধীকে নিশানা করে চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'পরিবারের মোহ ছাড়ুন। দলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনুন। সবার সম্মতিক্রমে দলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করুন। আপনি যদি আপনার দায়িত্ব এড়িয়ে যান তাহলে দেশের রাজনীতিতে ইতিহাস হয়ে যাবে কংগ্রেস। এই মূহুর্ত কংগ্রেস সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, দলের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই, দলের স্বার্থ কথা বলার জায়গা কমে যাচ্ছে, এমনকি দল অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে।' চিঠির লেখকদের মধ্যে রয়েছে দলের প্রাক্তন সাংসদ সন্তোষ সিং, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সত্যদেব ত্রিপাঠি।
Read in English