২০২০ সালে বিহারে নীতীশের নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসে এনডিএ সরকার। কিন্তু নীতীশ কুমারের দল সংযুক্ত জনতা দলের আসন অনেক কমে যায়। উল্টোদিকে বিজেপির আসন অনেক বাড়ে। যেহেতু এনডিএ নীতীশকে নেতা করেই নির্বাচনে লড়েছিল তাই তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগে থেকেই একেবারে স্বস্তিতে ছিলেন নীতীশ, এমনটা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল অনেক বার বলেছে।
তার অন্যতম কারণ, চিরাগ পাসওয়ান এবং তাঁর লোক জনশক্তি পার্টি। নীতীশের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল জনতা দলকে চাপে রাখতেই চিরাগ এবং এলজেপিকে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। যখন ভোটবাক্সে দেখা গেল, ভোট কাটাকাটির জন্য জনতা দলের আসন কমেছে, তখন বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় নীতীশের। একেবারেই মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি তিনি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুরোধে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন। তা সত্ত্বেও একেবারেই স্বস্তিতে ছিলেন না নীতীশ।
গত এক বছরে এনডিএ জোটের দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয়। যেটা দুবছরের মাথায় বিজেপি-জেডিইউ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ, বলছেন নীতীশ ঘনিষ্ঠরা। এক এক করে বাকি কারণগুলোয় নজর দেওয়া যাক-
সুশীল মোদী- প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদীকে মন্ত্রিসভার বাইরে রাখে বিজেপি। নীতীশের সঙ্গে সুশীলের সুসম্পর্ক সুবিদিত। আর দুই দলের বোঝাপড়ার ঘাটতি মেটানোর একমাত্র কারিগর হতে পারতেন সুশীল। নীতীশ বর্তমান দুই উপমুখ্যমন্ত্রী তারকিশোর প্রসাদ এবং রেণুদেবীর সঙ্গে কাজ করতে একেবারেই স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না।
লাগাতার বাকযুদ্ধ- নির্বাচনের পর থেকে গত দুবছর লাগাতার দুই দলের মধ্যে বাকযুদ্ধ। রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় জয়সোয়াল-সহ একাধিক বিজেপি নেতা প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অন্যদিকে, জনতা দলের পক্ষ থেকে উপেন্দ্র কুশওয়াহা পাল্টা দিয়েছেন। এত দ্বন্দ্বের মধ্যেও বিজেপির হাইকম্যান্ড নীরব থেকেছে। তাতেই নীতীশের মনে হয়েছে, সরকারকে চাপে রাখার চক্রান্ত হচ্ছে।
ভুল বোঝাবুঝি- সূত্রের খবর, মোদীর পাটনা সফরের সময় স্পিকার বিজয় কুমার সিনহা বিহার বিধানসভার শতবর্ষ অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু আমন্ত্রণ পত্রে সবার নাম থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর নামই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজ্যে আসছেন, অথচ অন্য কারও আমন্ত্রণে! এটা মেনে নিতে পারেননি নীতীশ। ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের আঘাতের কথা ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন BJP-র মহারাষ্ট্রের ছক বিহারে ভেস্তে দিল ‘মহাগটবন্ধন’, বুঝিয়ে ছাড়লেন তেজস্বী
দল ভাঙানোর ছায়া- গত মার্চে বিজেপি বিকাশশীল ইনসান পার্টির তিন বিধায়ককে ভাঙিয়ে নেয়। ৭৭ সংখ্যা নিয়ে বিধানসভায় বৃহত্তম দল হয়ে ওঠে। বাকিদেরও বার্তা দেয়। তার পরই আরসিপি সিং পর্ব শুরু হয়। নীতীশ তাঁকে রাজ্যসভার টিকিট দেননি। কিন্তু বিজেপি ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেন জনতা দলের নেতা।
অগ্নিপথ বিক্ষোভ- বিহারে হিংসা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। আর সেটাই বিজেপির সঙ্গে বিচ্ছেদের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বিজেপি নেতাদের দাবি ছিল, নীতীশ এই হিংসার নিন্দাও করেননি, আর শান্তি বজায় রাখার আবেদনও করেননি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতাকে ওয়াই ক্যাটাগরি সুরক্ষা দেওয়া নিয়ে নীতীশের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ভরসা নেই কেন্দ্রের, এতে এটাই প্রমাণিত হয়।
আরও পড়ুন নীতীশ বনাম বিজেপির কুর্সির লড়াই, বিহার বিধানসভায় কোন দলের বিধায়ক সংখ্যা কত
দিল্লির স্বপ্ন- নীতীশ বরাবরই জাতীয় রাজনীতিতে নিজের ছাপ রাখতে পছন্দ করেন। এক বিজেপি নেতার কথা, ২০২৫ সালে নীতীশ কুমার রাজনীতি ছেড়ে দেবেন ভেবেছিলাম আমরা। ততদিন ৭৫ বছর হয়ে যাবে তাঁর। কিন্তু তাঁর উচ্চাশা অনেক বেশি। মাঠ ছাড়ার লোক নন উনি। নিজেকে মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তুলে ধরতে চাইছেন নীতীশ। কতটা সফল হবেন তা সময়ই বলবে।