দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ কি আপাতত ঈষৎ 'অভিমানী'? তাঁর সাম্প্রতিক কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের একাংশের। অভিমান যে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন উদয়ন নিজেই। কিন্তু সেই অভিমান কার প্রতি, তা স্পষ্ট করেন নি প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা। ইতিমধ্যেই এনিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের অন্দরে।
বিশিষ্ট ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা কমল গুহর পুত্র উদয়ন দীর্ঘদিন কোচবিহারের শীর্ষস্থানীয় বামপন্থী নেতা ছিলেন। পরে দল বদলে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে তাঁর 'ব্য়র্থতার ফিরিস্তি' দিয়েছেন উদয়ন। মুখে তিনি বলছেন বটে তাঁর ব্যর্থতার জন্যই হয়তো কোচবিহারের মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন তৃণমূলের থেকে, কিন্তু রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই তাঁর সঙ্গে একমত নন। তাঁদের বক্তব্য, উদয়ন কৌশলে তৃণমূলের জেলাস্তরের নেতাদের 'গা-জোয়ারি'কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন।
ঠিক কী লিখেছেন উদয়ন?
দিনহাটার বিধায়ক জানিয়েছেন, তিনি অনেক অন্যায় করেছেন। এরপর পরপর ৮টি 'অন্যায়ের' ফিরিস্তি দিয়েছেন তিনি:
১। দিনহাটা শহরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গোলমাল থামাতে পারি নি
২। কলেজের ছাত্র গোলমালের দায় আমার উপর বর্তায়
৩। দিনহাটার পুকুরগুলি নষ্ট করেছি
৪। অনেক রাস্তা ম্যাস্টিক করে মানুষের চলাফেরার অসুবিধা করেছি
৫। অকারণে শহরে বেশি আলো লাগিয়ে টাকা নষ্ট করেছি
৬। ডাক্তারবাবুদের ফিজ ২৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছিলাম
৭। নার্সিং হোমে সিজার কেসের প্যাকেজ বেঁধে দিয়েছিলাম
৮। দিনহাটার প্রাণকেন্দ্র চৌপথি পরিষ্কার ও যানজট মুক্ত করতে চেয়েছিলাম
এরপর উদয়নের মন্তব্য, "দিনহাটার মানুষ পছন্দ করেন নি, শিক্ষা দিয়েছেন। আমি অনুতপ্ত।"
কেন এমন লিখলেন উদয়ন?
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। উদয়নের খাসতালুকেও পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই বিপর্যয়ের জন্য জেলার অন্য নেতাদের সঙ্গে উদয়নকেও শীর্ষ নেতৃত্বের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রাক্তন বামফ্রন্ট নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি যথাসাধ্য কাজ করেছেন, কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের "দাদাগিরি ও হিংসা" ভোটারদের প্রভাবিত করেছে। কলেজে ছাত্র সংসদ দখল নিয়েও গোলমাল হয়েছে। এই বিষয়গুলি তাঁর হাতে ছিল না। কিন্তু নির্বাচনে খারাপ ফলের দায় তাঁকেও নিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন, রাজ্যে বিজেপির লক্ষ্য ২ কোটি সদস্য
উদয়ন ঘনিষ্ঠ এক কাউন্সিলরের কথায়, "দাদা প্রথম দু-টি পয়েন্টে সরাসরি দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এরপরের ছ-টি পয়েন্টে উনি নিজের কাজের খতিয়ান দিয়েছেন। দাদা দেখাতে চেয়েছেন, তাঁর এতগুলি ভাল কাজ দলের একাংশের দাদাগিরির জন্য মূল্যহীন হয়ে গিয়েছে।"
উদয়ন এই প্রসঙ্গে বলেন, "এক অর্থে অভিমান বলতেই পারেন। আমার নতুন কিছু বলার নেই। যা বলার ফেসবুকেই বলেছি। আসলে দিনহাটা শান্ত শহর। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষ বা কলেজে গোলমাল এই শহরের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। গোলমাল যে হয়েছে, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি বিধায়ক ও চেয়ারম্যান হিসাবে গোলমাল থামাতে পারি নি, এটাও সত্যি। গোলমালের দায় কার, তা নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। তবে যাঁরা আমাদের ভোট দিলেন না, তাঁরা আমার উন্নয়নমূলক কাজগুলির প্রতি সুবিচার করলেন কিনা, হাতজোড় করে ভেবে দেখতে অনুরোধ করব।"
তৃণমূলের দুই নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাঁরা ফোন ধরেন নি। টেক্সট মেসেজেরও জবাব মেলে নি। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা হাফিজ আমল সইরানি বলেন, "ক্ষমতার লোভ সামলাতে না পেরে তৃণমূলের মতো একটা আদর্শহীন দলে গিয়েছেন। এখন ধীরে ধীরে বুঝবেন তৃণমূল কেমন জিনিস!"