রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি ২০২১ বিধানসভার দামামা বাজিয়ে দিল। একদিকে করোনা নিয়ে হইচই, রেশন,পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিস্তর অভিযোগ, ঘনঘন রাজ্যপালের দ্বারস্থও হচ্ছে বিজেপি। অন্য দিকে বিজেপির প্রচারের মোকাবিলা কীভাবে করা যায় তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি লকডাউনে রাজ্যবাসীর ক্ষোভের আঁচে লাগাম টানতেও উদ্য়োগী দল। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পর রবিবার সর্বভারতীয় যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর ভিডিও কনফারেন্স করলেন রাজ্যের কয়েকশো নেতা-নেত্রীর সঙ্গে।
লকডাউনে জমজমাট বাংলার রাজনীতি। বিজেপির প্রচারের মোকাবিলায় একগুচ্ছ কর্মসূচি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, এদিনের সোশাল অ্য়াপ মারফত বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর স্বীকার করে নিয়েছেন লকডাউন পরিস্থিতিতে কিছু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তবে তিনি সেই ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়ার নিদানও দিয়েছেন। অভিষেকও একাধিক ইস্যু তুলে ধরে বিজেপির প্রচারের বিরোধিতার ওপর জোর দিয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্স, সোশাল মিডিয়া ব্য়বহার করে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। মূলত ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ বিজেপির মিথ্যা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রচারের দাওয়াই বাতলেছেন।
সূত্রের খবর, রবিবারের বৈঠকে পিকের বক্তব্য ছিল, "তাঁর টিম রাজ্যে ১৫ হাজার লোকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের সঙ্গে কথা-বার্তায় বোঝা গিয়েছে লোকের মধ্যে ক্ষোভ আছে। লকডাউনে ঘরে আটকে থাকায় তাই ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক বিষয়। তাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ও প্রচারে জোর দিয়ে সেই ক্ষোভে প্রলেপ দিতে হবে।" পিকের কথায়, "আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। ৯৯ জন কিছু পেলেও একজন না পেলে সেটাই বড় করে দেখানো হবে, ভুলে যাবে ৯৯ জনকে দেওয়ার কথা। তাই চোখ-কান খোলা রাখতে হবে দলীয় নেতা-কর্মীদের।"
আরও পড়ুন- রেশন নিয়ে মাতব্বরি নয়, পারলে নিজেদের পয়সায় রেশন দাও, তৃণমূল জেলা সভাপতিদের ধমক মমতার
জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিজেপির অপপ্রচার মোকাবিলায় জোরালোভাবে পাল্টা প্রচার চালাতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে রাজ্য সরকার ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করেছে। পরিষ্কার রূপরেখা তৈরি করে সবাইকে ফেরাচ্ছে। তাছাড়া ১৩ থেকে ১৮ মে অবধি জুম অ্যাপ মারফত সাংবাদিক বৈঠক করবেন বিধায়করা, প্রতিদিন ৫০ জন করে। একইসঙ্গে মানুষের পাশে থেকে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে কারও যেন কোনও অসুবিধা না হয়। রেশন নিয়ে কারও যেন সমস্য়া না হয়, নজর রাখতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি, জেলা যুব সভাপতি, নেতৃত্ব নিয়ে প্রায় ৫০০ জন এই বৈঠকে যোগ দেন।
যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণের কথা তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, অভিষেক বলেছেন, "বিজেপি বিদ্যুৎ বিল মকুবের দাবি করছে। অথচ রাজ্যের প্রাপ্য টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিলে বিদ্যুৎ বিল মকুব কেন, অনেক কিছু করতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র সরকারি কর্মচারীদের ডিএ কেটেছে, অনেক রাজ্য সরকার বেতন কাটছাঁট করেছে। বাংলায় কিন্তু এপ্রিলের পর মে মাসেও পয়লা তারিখের মধ্যেই বেতন পেয়ে গেছেন সকলে। অথচ এ সব প্রচারে আসছে না।" সার্বিকভাবে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে শান দিতে বলেছেন। সূত্রে খবর, তাঁর বক্তব্য়, "কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক বিষয়ে বিমাতৃসুলভ আচরণ করলেও মমতা বাংলায় ৬৮টি কোভিড হাসপাতাল গড়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে দিয়েছেন পিপিই-সহ সুরক্ষা সরঞ্জাম। করোনা চিকিৎসায় এখানে কোনও অসুবিধা নেই, অনেকেই দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। তবু বিজেপি নোংরামি করছে। আমাদের মানুষের কাছে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন