সর্বদলীয় বৈঠকে ডান-বাম সকলে এক হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বললেন। তবে লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক ও গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানালেন বিরোধীরা। এদিন রাজ্যে কালোবাজারি নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা। মৃদু স্বরে সব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন সিপিএম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্যের বাইরে থেকে আসা শ্রমিক ও অসংগঠিত শ্রমিকদের বিশেষ প্যাকেজ দেওয়ার দাবি জানান। তাঁর দাবি, "জনধন প্রকল্পের ১৫ লক্ষ টাকার দরকার নেই। আপাতত কেন্দ্রীয় সরকার ৫ হাজার টাকা দিক। রাজ্য দিক ২ হাজার টাকা।" তাঁর বক্তব্য, "আইটি সেক্টরকে জরুরি পরিষেবা হিসাবে ছাড় দেওয়ার কোনও দরকার নেই। তাঁরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতেই পারে।" সুজনবাবু এনপিআর ও জনগণনা বন্ধ রাখার প্রসঙ্গ তুলতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, "দুটোই আমরা বন্ধ করে দিয়েছি"। এরপরই এই যুদ্ধে সবাইকে রাজ্য সরকার যে নির্দেশ দেবে তা মেনে একসঙ্গে চলতে হবে বলেও জানিয়ে দেন সিপিএমের এই নেতা।
বৈঠকে সিপিএমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানও করোনা লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। মান্নান বলেন, "কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগই থাকুক না কেন, এখন এক হয়ে লড়াই চাই। মানবিক দিক আছে। দক্ষিণ ভারতে অনেক লোক আটকে আছে। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা খেতে পাচ্ছেন না। আমাকে অনেকে বলেছেন। এঁদের দেখতে হবে"। তৎক্ষণাৎ মমতা জবাব দেন, "পুরো বিষয়টা ডিজি পুলিশ দেখছেন। যেটা জেনুইন কেস সেটার ব্যবস্থা করা হবে"।
বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, "লকডাউনের জন্য বিভিন্ন কলকারাখান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কীভাবে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় তা দেখতে হবে। কিছু লোক অনাহারে মারা যাবেন তা হয় না। তাছাড়া, বাজার খোলা রাখতে বলেছেন (মুখ্যমন্ত্রী)। সেখানে যেন থার্মাল টেষ্ট হয়"। মমতার বক্তব্য, "রাজ্যে পর্যাপ্ত কিটস নেই। কী করে টেষ্ট করব? ওই মেশিন ডাক্তারদের আগে দিই। তারপর অন্য জায়গায় দেওয়া হবে।" মান্নান আরও বলেন, "রাজনৈতিক ভেদাভেদ থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নেব। সমালোচনা করা সহজ, কাজ করা কঠিন। সবটা রাজ্য করবে তা তো হতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে টাকা দিতে হবে।"
আরএসপি নেতা, মনোজ ভট্টাচার্য, অশোক ঘোষ শ্রমিকদের অবস্থার কথা বলেছেন। চটকল বন্ধ রাখার কথা বলেন অশোকবাবু। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, "আজ থেকে চটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।"
তবে এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপি করোনা নিয়ে নাম না করে রাজ্যের আমলার ভূমিকা প্রসঙ্গে সমালোচনা করেছে। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, পশ্চিমবঙ্গের দিকেই নজর বেশি। এরমধ্যে একজন মারা গিয়েছেন। চিনের 'সেফ হাউস' মডেলের কথা বলেন জয়প্রকাশ মজুমদার।
জয়প্রকাশ জানান, আইসিএমআর বলছে কিটের অভাব নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কিট খুবই অপ্রতুল। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও কিটের সমস্যার কথা বলেছি। লুকানোর চেষ্টা করব কেন! কিট না হলে টেষ্ট হবে না। নির্দেশ রয়েছে, শ্বাসকষ্টের লক্ষন দেখা গেলে টেষ্ট করবেন। না হলে করবেন না। প্রাইভেট ক্ষেত্রে এখনও আদেশ আসেনি। পাশাপাশি মমতা বিজেপির এই নেতাকে বলেন, "কেন্দ্রকে বলুন না টাকা দিতে। বুলবুলের টাকাও যদি দিত। এখন কাজে লাগত। পলিটিক্স আমরা পরে করব"।
বিজেপির আর এক নেতা সায়ন্তন বসু করোনার জন্য কলকাতা শহরে ডেডিকেটেড হাসলপাতালের কথা বলেন। মমতা জানিয়ে দেন, "রাজারহাটে ক্যানসার হাসপাতালে ৫০০ বেড রয়েছে। বেলেঘাটা, আরজি কর-এ, বাঙ্গুরে ব্য়বস্থা আছে।" বৈঠকে মমতা আরও জানান, ২০১৯-২০তে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের আমরা আহ্বান করেছি।