মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সোচ্চার হলেন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির বিরুদ্ধে। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চোধুরী সরাসরি স্থানীয় তৃণমূলের প্রঞ্চায়েত প্রধান ও এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বেজায় অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিকে ওই পঞ্চায়েত প্রধান দাবি করেছেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এভাবে জেলা তৃণমূলকে এড়িয়ে প্রকাশ্যে এমন কাজ করা উচিত হয়নি বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন- তৃণমূলে তোলপাড়, অরূপের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ রাজীবের
ইংরেজবাজারের তিন বারের বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সোমবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "যুদপুর ২ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আঞ্জুর রহমান জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অ্যাকাউন্ট গ্রাহকরা বারে বারে ব্যাংকে গেলেও কোনও এটিএম কার্ড, পাসবই বা চেকবই পায়নি। বরং প্রতিবারই ব্যাংক কতৃপক্ষ তাঁদের বলেছে প্রধানের কাছে যেতে। ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ যদুপুর ২ অঞ্চলে জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট করার শিবির হয়েছিল। আমি ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিতে যাই। তখন অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখে জানতে পারি, এক একটা অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে।" দলের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে মমতা মন্ত্রিসভার প্রাক্তন এই সদস্যের এমন সরাসরি অভিযোগে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- আমফান ত্রাণ দুর্নীতিতে এবার হাওড়ায় ৩ তৃণমূল নেতা সাসপেন্ড
ওই জিরো ব্যালেন্সের অ্যাকাউন্টে মূলত ধান কেনার টাকা নিয়ে দুর্নীতি বয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের এই প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের গরিব মানুষকে দেওয়া ৫০০টাকা, আদিবাসীদের ভাতাও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, "এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তৃণমূলের যদুপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সাজ্জাদ আলি, কয়েকটি ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখা, হোটেল ও এক চালকল মালিক। এ বিষয়ে যদুপুরের চারজন গ্রামবাসী ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এঁরা কেউই ধান বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত না থাকা সত্বেও এঁদের অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার টাকা জমা পড়েছে, আবার তোলাও হয়েছে। লকডাউন চলাকালীন এই টাকা তোলা হয়েছে। তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যে ব্যবহার করা হয়েছে তা উপভোক্তারা জানেনও না।"
আরও পড়ুন- ‘সিপিএম আমলে ১০০ শতাংশ চুরি হত, এখন ৯০ শতাংশ কমেছে’
সারা বছরই নানা প্রকল্প খাতে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উপোভোক্তাদের কাছে হাজার হাজার টাকা আসে। সেই সব টাকাও নয়ছয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেন, "ব্যাংকে পাসবই, এটিএম বা চেকবই আনতে গেলে ব্যাংক থেকে বলা হত প্রধানের কাছে যান। প্রধানের কাছে গেলে বলত ব্যাংকে যান। গত কয়েকমাস ধরে এভাবেই চলছিল। বিষয়টা আমি শুভেন্দু অধিকারীকেও জানিয়েছি। টাকা তোলা হয়েছে চেক বা সোয়াইপ মেশিন থেকে।"
আরও পড়ুন- তৃণমূল সদস্যরা লুটেপুটে খাচ্ছে, মানলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়
যদুপুর ২ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান সাজ্জাদ আলি কৃষ্ণেন্দুবাবুর অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সাজ্জাদ বলেন, "আমি অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছি। কী লেনদেন হয়েছে তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। তবে আমি চাই সঠিক তদন্ত হোক। তাহলে তিনি যে মিথ্যা কথা বলছেন তা প্রমাণ হয়ে যাবে। আমি নানা বিষয় নিয়ে বিধায়ক ও দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করি। এসব কথা তিনি দলের মধ্যেই বলতে পারতেন। উনি, আমি একই দলের সদস্য।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন