উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় রওনার আগে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন রাজ্যপাল। পাহাড়ের উন্নয়নের বদলে জিটিএ মারফত কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন জগদীপ ধনকড়। স্বচ্ছতার জন্য জিটিএ অ্যাকাউন্টের অবিলম্বে অডিটের দাবি তুলেছেন তিনি।
২০১৭ সালে তৈরি হয় জিটিএ। এটি স্বশাসিত একটি সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জিটিএ-র কাজের দায়িত্ব বন্টন হয়। মূলত পাহাড়ের উন্নয়নে গঠিত এই স্বশাসিত সংস্থার প্রথম প্রধান ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গ। কিন্তু এই সংস্থা কাজ শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে। এরপর রাজ্য সরকার বিমল গুরুঙ্গকে সরিয়ে জিটিএ চেয়ারম্যান করে বিমল বিরোধী মোর্চা মেতা বিনয় তামাঙকে। পরে জিটিএ চেয়ারম্যান করা হয় অনিত থাপাকে। বর্তমানে পরিচালনমণ্ডলী জিটিএ চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই জিটিএ পরিচালক সদস্যরা মনোনিত। আর এতেই আপত্তি রাজ্যপালের। শতাধিক পুরসভার মতো কেন এতদিন জিটিএ-তে নির্বাচন হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের সাসংবিধানিক প্রধান। জিটিএ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যপূরণেও ব্যর্থ বলে দাবি করেছেন ধনকড়।
এদিন রাজ্যপাল বলেছেন, 'গত কয়েক বছরে পাহাড়ের উন্নয়ন হয়নি। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। উন্নয়নে কিভাবে টাকা খরচ হয়েছে তার অডিট হয়নি। এভাবে চলতে পারে না। অবিলম্বে ক্যাগকে দিয়ে হিসাব মেলানো প্রয়োজন। ক্যাগকে দিয়ে আমিই অডিট করাব।'
আরও পড়ুন- টিকাকরণে ‘মাইলফলক সাফল্য’, আমেরিকাকে ছাপিয়ে গেল ভারত, ঘোষণা স্বাস্থ্যমন্ত্রকের
বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য গড়ার দাবি তুলেছেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা। একই সুর উত্তরবঙ্গে বিজেপির বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়কের। দলীয় সাংসদের তোলা রাজ্যভাগ্যের দাবি থেকে বঙ্গ বিজেপি দূরত্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কিন্তু বঞ্চনার অভিযোগে সরব গেরুয়া নেতারাও। জিটিএ-তে দুর্নীতি হচ্ছে বলেও এর আগে অভিযোগ করেছিল বিজেপি। এদিন ধনকড়ের জিটিএ তোপ যেন পদ্ম বাহিনীর সেই অভিযোগকেই সিলমোহর দিল।
স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যপালের দাবিকে সঠিক বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, 'উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ এলেও তা আসেন নয়ছয় হচ্ছে। তাই অডিট প্রয়োজন।' অন্যদিকে ধনকড়ের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেছেন, 'পাহাড়জুড়ে সবধরণের উন্নয়ন হচ্ছে। প্রতিবছর অডিটও হয়। সেসব রাজ্যপালের চোখে পড়ে না। অডিটের আগেই উনি কীভাবে বলছেন যে দুর্নীতি হয়েছে? আসলে উনি পাহাড়ের মানুষকে অসম্মান করছেন।' দুর্নীতি অভিযোগ উড়িয়েছেন মোর্চা নেতা অনিত থাপাও।
তবে ক্ষমতাবলে কী রাজ্যপাল রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে ক্যাগকে দিয়ে অডিট করাতে পারে? প্রশ্ন উঠছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন