আমফান ত্রাণ দুর্নীতিতে রাজ্য-রাজনীতি যখন সরগরম, ঠিক তখনই জ্যোতি বসুর জন্মদিনে কলকাতা পুলিশের মঞ্চ থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতির অতীত অভিযোগ তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দক্ষিণ কলকাতার হাজরায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট কথা, "সিপিএম-এর সময় ১০০ শতাংশ চুরি হত। তা এখন ৯০ শতাংশ কমেছে।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পর সিপিএম নেতৃত্ব রেরে করে উঠেছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, বিধানসভার পরিষদীর দলনেতা সুজন চক্রবর্তীরা বলেন, "সিপিএমের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ১০ বছরে একটাও কেস খুঁজে পাননি।"
আরও পড়ুন- তৃণমূল সদস্যরা লুটেপুটে খাচ্ছে, মানলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়
আগামী বছর রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম এই নির্বাচনী লড়াইয়ের ছক প্রস্তুত করছে। করোনা ও আমফান পরিস্থিতিতেও ময়দানে নেমে পড়েছে ডান-বাম উভয়পক্ষই। এরই মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমফানের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে বিদ্ধ শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক জমি মজবুত করা নন্দীগ্রামেই তৃণমূল ২৫ জনকে সাসপেন্ড করেছে। অনেকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন বলেও দলীয় নেতৃত্ব দাবি করছে। এবার পাল্টা সিপিএমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা তুলে ধরলেন রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- প্রশান্ত কিশোরের “দিদিকে বলো” কে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে “বাপ কে বলো”
এদিন বিশিষ্ট সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন। এই দিনেই ফের সিপিএমের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা পুলিশের ওই অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সিপিএমের সময় পঞ্চায়েতে ১০০ শতাংশ চুরি হত। সব চোর উৎখাত করা সম্ভব নয়। তাও ৯০ শতাংশ চুরি কমিয়েছি। অন্য রাজ্যের চুরি, দুর্নীতির তুলনায় এখানে এনেক কম হয়। এটুকুও থাকবে না। আমি আমার পার্টিকেও ছেড়ে কথা বলি না, মানুষের টাকা যাতে কেউ না মারতে পারে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে পুলিশ এফআইআর করেছে, গ্রেফতার করেছে, অ্যাকশন নিয়েছে। নিচু তলায় বা সরকারি জায়গায় যে ৭, ৮ শতাংশও চুরি বা দুর্নীতি রয়েছে তা দমনে দিন-রাত লড়াই করছি।"
আরও পড়ুন- ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে ক্ষতিগ্রস্তরা
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিএম। "জ্যোতি বসু, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন। ১০ বছরে একটা প্রমাণ করতে পেরেছেন?" প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। সেলিম বলেন, “চিটফান্ডের সময় বলেছেন যা গিয়েছে তা গিয়েছে, আমফানের টাকা ফেরত দেবে তা হয় নাকি। সিপিএম আমলের তদন্ত করতে তিন ডজন কমিশন তৈরি করেছেন। ১০ বছর সময় পেয়েছিলেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন। কোন কমিশনের রিপোর্টে সিপিএমকে দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছেন? এত তো সিআইডি, পুলিশ। আজও চ্য়ালেঞ্জ করছি...।" তাঁর স্পষ্ট কথা, "আমফানের টাকা চুরি হয়েছে। এখন সিপিএম-কে দেখাচ্ছেন কেন?"
আরও পড়ুন- নারদকাণ্ড: শোভন বাদ, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেই নোটিস মুকুলকে
যাদবপুরের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, "বামফ্রন্টের আমলে একটা ঘটনা দেখাতে পারবেন না যেখানে মন্ত্রী কোথাও হাত পেতেছেন, টাকা নিয়েছেন। ৩৪ বছর ধরে বামফ্রণ্টের মন্ত্রীসভার অত মন্ত্রী, ধুতিতে বা পাঞ্জাবীতে একটা কালো দাগ ছেটানোর হিম্মত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন, কারও হয়নি। সিবিআই, ইডি কারও কোনও দিন হয়নি। বরং যারা হাত পেতে টাকা নেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে সরকার চালান। ১০ বছরে ৩০ কোটি টাকা খরচ করে একের পর এক কমিশন করেছেন, সিপিএম কত দুর্নীতি করেছে তা প্রমাণ করার জন্য। একটা কমিশনে আজ পর্যন্ত রিপোর্ট বের করতে পেরেছেন?" তাঁর দাবি, "আমফানে সাড়ে ৬হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন