গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ ও তাঁর সহযোগী গুলামের এনকাউন্টারে নিহত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বৃহস্পতিবার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠকে ইউপি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স দলের প্রশংসা করেছেন। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।
সংবাদ সংস্থাটি সূত্রে খবর, যোগী ডিজিপি, বিশেষ ডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) এবং পুরো এসটিএফ দলের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, আদিত্যনাথের সামনে এনকাউন্টারের একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। তারপরই তিনি এসটিএফের প্রশংসা করেছেন।
আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ এবং তার সহযোগী গোলাম, উভয়েই উমেশ পাল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার ঝাঁসিতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এনকাউন্টারে তারা নিহত হয়েছে। দু’জনের প্রত্যেকে মাথার ওপর ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছিল। ডেপুটি পুলিশ সুপার নভেন্দু ও বিমলের নেতৃত্বে ইউপি এসটিএফ দল অভিযুক্তদের থেকে অত্যাধুনিক বিদেশে তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
সংবাদমাধ্যমকে একথা জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ অতিরিক্ত ডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার। সাংবাদিকদের বিশেষ ডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার বলেছেন, সরকার মাফিয়াদের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। যার ফল আজ সবার সামনে।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার, প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদকে তার ভাইয়ের সঙ্গেই প্রয়াগরাজের এক আদালতে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে পেশ করা হয়। গত মাসে, আতিক আহমেদ ও অন্য দু’জনকে ২০০৭ সালে উমেশ পালের অপহরণ মামলায় প্রয়াগরাজ আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি একাধিক এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই ভুয়ো এনকাউন্টার বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বেছে বেছে রাজপুত ও ঠাকুর বাদে অন্যান্য মাফিয়াদের হত্যা করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ঠাকুর ও রাজপুতদের তীব্র বিরোধ রয়েছে। সেই হিসেব মাথায় রেখে ব্রাহ্মণ মাফিয়াদেরও বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। যদিও পুলিশের দাবি, এই সব দুষ্কৃতীরা সবাই সংঘর্ষে মারা গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, গোটা ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনায় পিছন থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
আসাদ আহমেদ এবং সহযোগী উভয়েই উমেশ পাল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। তারা উভয়েই ৫০ দিন ধরে পলাতক ছিলেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে যোগী আদিত্যনাথ সরকার প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এটি উত্তর প্রদেশে ১৮৩ তম নম্বর এনকাউন্টার, সেই সঙ্গে চলতি মাসেই এটা উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তৃতীয় এনকাউন্টার।
রাজ্যের যোগী সরকার 'জিরো টলারেন্স নীতিতে' অপরাধীদের শায়েস্তা করছে। গত ৬ বছরে, যোগী শাসনকালে ১৮৩ জন 'ভয়ঙ্কর অপরাধীকে' এনকাউন্টারে খতম করা হয়েছে । উত্তরপ্রদেশের পুলিশের এই দ্রুত পদক্ষেপ রাজ্যে নিঃসন্দেহেই অপরাধীদের জন্য এক কঠোর বার্তা।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিশেষ ডিজি আইন ও শৃঙ্খলা প্রশান্ত কুমার বলেছেন যে এ পর্যন্ত ১৮৩ জন অপরাধীকে এনকাউন্টারে নিকেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই লড়াইয়ে ১৩ জন পুলিশকর্মীও শহীদ হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ যে সকল এনকাউন্টার এখনও পর্যন্ত করেছে তার বেশিরভাগ এনকাউন্টার হয়েছে মিরাট জেলায়। এখানেই এনকাউন্টারে ৬৩ জন অপরাধী নিহত হয়েছেন, এবং ৫,৯৬৭জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে এনকাউন্টারে দ্বিতীয় আগ্রা। এখানে যোগী শাসনকালে ১৮৪৪টি এনকাউন্টার করা হয়েছিল। এতে ৮হাজার ৬০০-এর বেশি অপরাধীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি এনকাউন্টারে ১৪ জন অপরাধীকে নিকেশ করা হয়েছে। আগ্রা পুলিশের ভয়ে অনেক অপরাধী জেলা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছেন।
ইউপি পুলিশের বিশেষ ডিজি আইন ও শৃঙ্খলা প্রশান্ত কুমার বলেছেন যে জিরো টলারেন্স নীতিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকবে। STF টিম তাদের অপারেশন চালিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ আহমেদও এনকাউন্টারে নিহত হন। সরকারী পর্যায় থেকে দলের সকলকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।