Advertisment

করোনা মোকাবিলায় ভূমিকা: দৌড়ে এগিয়ে বেশ কয়েকজন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী

উত্তরপ্রদেশে করোনার চেয়েও গুরুতর হয়ে উঠেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ইস্যু। এই পরিস্থিতিতে সকলকে চমকে দিয়ে আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন, ভবিষ্যতে উত্তরপ্রদেশ থেকে পরিযায়ী শ্রমিক নিতে হলে, যে কোনও রাজ্যকেই আগে উত্তরপ্রদেশ সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona Bjp CMs

বি এস ইয়েদুরাপ্পা (কর্নাটক), যোগী আদিত্যনাথ (উত্তরপ্রদেশ), বিপ্লব কুমার দেব (ত্রিপুরা) এবং জয়রাম ঠাকুর (হিমাচলপ্রদেশ) প্রশংসা অর্জন করেছেন

কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং লকডাউন যদি সরকারের সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়, তাহলে বেশ কয়েকজন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে দলের মধ্যে ও দলের বাইরে বিরোধীদের শুধু দুর্বল করেছেন তাই নয়, এই সুবাদে রাজনৈতিক পুঁজিও সঞ্চয় করে ফেলেছেন। কিন্তু  ব্যাপক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন এ ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছেন।

Advertisment

যেসব মুখ্যমন্ত্রীরা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন অনেকটাই, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বি এস ইয়েদুরাপ্পা (কর্নাটক), যোগী আদিত্যনাথ (উত্তরপ্রদেশ), জয়রাম ঠাকুর (হিমাচলপ্রদেশ), এবং বিপ্লব কুমার দেব (ত্রিপুরা)। এধিকে চারবারের মুখ্যমন্ত্রী ও বিপুল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হাই প্রোফাইল নেতা শিবরাজ সিং চৌহান পরিস্থিতি এখনও আয়ত্তে আনতে পারেননি।

শিবরাজের মত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নন গুজরাটের বিজয় রুপানি। তিনিও করোনা সংক্রমণ আটকানো বা পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা মোকাবিলায় ব্যর্থ। এমনকী বিহারে, যেখানে জেডি-ইউ ও বিজেপি যৌথভাবে সরকারে রয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং যত বেশি পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরছেন, তত পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।

আরও পড়ুন, করোনায় গুজরাতের হাল নিয়ে মোদী-শাহকে বিঁধল কংগ্রেস

দলের আভ্যন্তরীণ সূত্র জানাচ্ছে, নেতৃত্বের তরফ থেকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও গোয়ার প্রমোদ সাওয়ান্ত, হরিয়ানার মনোহরলাল খাটুয়া, উত্তরাখণ্ডের ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত এবং পেমা খাণ্ডুকে তাঁদের কাজের জন্য প্রশংসা করা হয়েছে। এঁদের বাস্তবানুগ দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিস্থিতি হাতের বাইরে না যেতে দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণের ফলে তাঁদের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে যা দলের মধ্যে ক্ষমতাবিন্যাসের বদল ঘটাতে পারে।

এরপর কেন্দ্র ভাইরাস আটকানো ও লকডাউন নিয়ে গোটা সিদ্ধান্তই রাজ্যের উপর ছাড়বে, কারণ তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনীতিও। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

সত্যি কথা বলতে এঁদের মধ্যে কারও কারও কাছে এই অতিমারী নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার সুযোগ এনে দিয়েছে।

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটার আগে বেশ মুশকিলেই ছিলেন ইয়েদুরাপ্পা। রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতা তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে অখুশি ছিলেন এবং চাইছিলেন ইয়েদুরাপ্পা কর্মপদ্ধতি বদলে ফেলুন। কিন্তু কর্নাটকে করোনায় প্রথম মৃত্যু হলেও নিজের অভিজ্ঞতা ও নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে যেভাবে অতিমারীর মোকাবিলা করেছেন, তা অন্য রাজ্যগুলির কাছে মডেল হতে পারে।

প্রথম সপ্তাহেই তিনি পরিস্থিতির দায়িত্ব নিয়ে নেন, বিভিন্ন আমলাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন এবং দলের মধ্যেকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতাদের সম্পূর্ণ সাইডলাইন করে দেন। ভাইরাস সংকটের সময়ে রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি নিজের ভূমিকা পালন করেন। তাবলিগি ঘটনায় মুসলমানদের আক্রমণ করার বিরুদ্ধে কঠোর সাবধানবাণী দেওয়া এবং অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াই চার্চের ভূমিকার প্রশংসা করে দেওয়া তাঁর বিবৃতি বিভিন্ন মহল থেকে সমীহ আদায় করে নেয়।

আরও পড়ুন, তাবলিগি জামাত নিয়ে বিতর্কিত চিঠি, সরানো হল আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের সদস্যকে

সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে আরেক মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী। সূত্র বলছে উত্তরপ্রদেশে করোনা মোকাবিলায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা দেখে আমলারাও বিস্মিত। রাজ্যের অতিমারী মোকাবিলায় সমস্ত দিক তিনি খতিয়ে দেখছেন এবং প্রতিদিন জেলা কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রিবর্গ, ও বরিষ্ঠ আধিকারিকদের সঙ্গে প্রতিদিন বৈঠকে হাজির থাকছেন।

উত্তরপ্রদেশে করোনার চেয়েও গুরুতর হয়ে উঠেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ইস্যু। এই পরিস্থিতিতে সকলকে চমকে দিয়ে আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন, ভবিষ্যতে উত্তরপ্রদেশ থেকে পরিযায়ী শ্রমিক নিতে হলে, যে কোনও রাজ্যকেই আগে উত্তরপ্রদেশ সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এই ঘোষণার বাস্তবতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এরই সঙ্গে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাস পাঠানোয় তাঁর নিচের তলার মানুষের আস্থা অর্জনের কার্যসিদ্ধি সম্ভবত হয়ে গিয়েছে।

হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শেষ ভিডিও কনফারেন্সে তাঁর বাহবা অর্জন করেছেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের যে কোনও রোগের ক্ষেত্রে সারা রাজ্যের সকলের পরীক্ষা করানোর যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন মোদী।

এ ছাড়া রেড জোনে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও যেবাবে সাফল্যের সঙ্গে ফার্মা হাব চালু করে দেশের মধ্যে ব্যবহারের জন্য ও রফচানির জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে তাঁর এই উদ্যোগ।

আসাম এখনও অবধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, যার ফলে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রখর প্রতিবাদের মুখে থাকা সোনোয়াল ও বিশ্বশর্মা কিছুটা স্বস্তিতে। তবে সীমান্তের জেলাগুলিতে এখনও রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে সংকট এখনও কাটেনি।

ত্রিপুরায় বিপ্লব কুমার দেব দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যই শিরোনামে আসতেন। সে ইমেজ পিছনে ফেলে তিনি এখন সংকটকালীন সময়ে কার্যকরী মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে করোনামুক্ত রাজ্য বলে ঘোষণার পরে একটি বিএসএফ ইউনিটের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ত্রিপুরা ফের সামনে উঠে এসেছে।

নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলন করে এবং বিবৃতি দিয়ে খট্টর বোঝাতে চাইছেন তিনিই হরিয়ানার দায়িত্বে, যদিও দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছেই। রাজ্যে যেসব দলীয় নেতারা নেতৃত্বের বদল চাইছিলেন, আপাতত তাঁদের মুখ বন্ধ করেছেন রাওয়াতও।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

bjp yogi adityanath BS Yedurappa COVID-19
Advertisment