নিষ্ক্রিয় সদস্যদের দল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল সিপিএম। ২০১৬-র অক্টোবরে কলকাতা প্লেনামের পর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রায় ৩০,০০০ সদস্যকে ছাঁটাই করা হয়েছিল বলে খবর। তাতেও প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়নি বলে মনে করে রাজ্য সিপিএম। কাজেই ফের ছাঁটাইয়ের পথে হাটতে চলেছে দল। কিন্তু সিপিএমের নীচুতলার কর্মীরা মনে করছেন, রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশ নিজেরাই নিষ্ক্রিয়। তাঁরা আবার ছাঁটাই করবেন? মাঠে-ময়দানে আন্দোলনের কর্মসূচি কোথায়? কলকাতায় লাল ঝান্ডা নিয়ে ইদানীং কোনও বড় কর্মসূচি হয়েছে? এমনই প্রশ্ন তুলছেন নীচুতলার কর্মীরা। এবং ক্ষোভের সঙ্গে অনেকেই এখন পদ্মশিবিরে নাম লেখাচ্ছেন।
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করেন, তাঁদের অনেক কর্মী দলের কর্মসূচি পালন করছেন না। দলের হয়ে কোনও কাজ করছেন না। নামকাওয়াস্তে দলের সদস্যপদ ধরে রেখেছেন। এঁরা দলে থাকাও যা, না থাকাও একই। নিষ্ক্রিয় এই কর্মীদের কোনও ভূমিকাই থাকছে না। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার কর্মীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, এই ইস্যুতে আরও সদস্য বাদ পড়তে চলেছেন।
আরও পড়ুন: বাম নেতাদের সুরক্ষা দেওয়া বন্ধ করবেন না, বিপ্লব দেবকে অনুরোধ ত্রিপুরার বিরোধীদের
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় উপনির্বাচন হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সিপিএমের ভোট ট্রান্সফার হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। সেই ধারা কিছুতেই রোধ করতে পারা যায় নি। বরং মহেশতলায় উপনির্বাচনের দিন বুথে বসে সিপিএমের কর্মীর বলেছেন, তৃণমূলকে হারাতে তাঁরা বিজেপির সঙ্গে জোট করতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিএমের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, দলে থেকেও "বিজেপির হয়ে কাজ করছেন" যাঁরা, তাঁদের একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেখাতে পারল না দল। "এখন তো বিজেপিতে যাওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিতে বলেছে। এসব ক্ষেত্রে কি কিছু করা গিয়েছে? নিষ্ক্রিয় সদস্য বলে লম্ফঝম্প করে কোনও লাভ আছে?"
সিপিএমের নীচুতলার কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, নিষ্ক্রিয় কারা, নেতৃত্ব না সদস্যরা? তাঁদের অভিযোগ, গত সাত বছরে এক নবান্ন অভিযান করেই "দম ফুরিয়ে গিয়েছে" রাজ্য নেতৃত্বের। তারপর আর বড় কর্মসূচির দেখা নেই। যাও বা দু-একটা মিছিল-মিটিং হচ্ছে, তাতেও লোক হচ্ছে না। লাগাতার আন্দোলনের কোনও লক্ষণই নেই বিপ্লবী দলের। তাঁদের বক্তব্য, এরই মধ্যে যে ব্রিগেডে সভা করাতে চলেছে দল, সেখানে "কালঘাম ছুটলেও" ব্রিগেড ভরাতে পারবে কি?
সিপিএমের সদস্য সংখ্যা কত, তাও এখন আর খোলসা করার সাহস নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একসময় দলের রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস মেম্বারশিপের সংখ্যা বলেছিলেন। তারপর আর তা নিয়ে দলের কোনও রা নেই। দলের অভ্যন্তরে কাজেই একটাই প্রশ্ন, নিষ্ক্রিয় কারা? নেতৃত্ব না সদস্যরা?